৩৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোট পেয়েছে নৌকা

ছবি-সমকাল
আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:৫০ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৫:২৯
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ৩৩ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগের নৌকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রদত্ত ভোটের ২৭ শতাংশ। এই আসনে জয় পাওয়া ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান ভোট পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত সাতটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার সবচেয়ে কম ভোট এটি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় নেতাকর্মীকে উপেক্ষা, বেপরোয়া আচরণ ও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়া নিয়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন দলীয় ও সাধারণ ভোটাররা। যার কারণে লজ্জাজনক হার হয়েছে নৌকার। বাঁশখালীকে এবার আরেক লজ্জায় ফেলেছেন এই জনপ্রতিনিধি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম নির্বাচনের দিন কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। অবশ্য সংসদ সদস্যের অনুসারীরা বলছেন, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে হেরেছে নৌকা।
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সুলতান উল কবির চৌধুরী। প্রদত্ত ভোটের ৩২ শতাংশ। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে এই তিনটি নির্বাচনে নৌকা ভোট পেয়েছে যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৯১ ও ৪৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এই দুটি নির্বাচনে তিনি ভোট পান প্রদত্ত ভোটের ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও ৭২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
গত রোববারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২২৩। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৪৯৯ ভোট। নৌকা প্রতীকের মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করায় তাঁর ভোট গণনা করা হয়নি। তবে বাতিল ভোট ছিল ৩৬ হাজার ৯৬৮। এর মধ্যে নৌকা প্রায় ৩৫ হাজার ভোট পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের ২৭ বছর দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন শ্যামল কান্তি দাশ। তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের ১০ বছরের দায়িত্ব পালনকালে দলীয় নেতাকর্মীরা ছিল উপেক্ষিত। তিনি টাকা ছাড়া কিছু চেনেন না। গুটিকয়েক লোকজনকে নিয়ে তিনি ছিলেন। যার কারণে নির্বাচনে দলীয় কর্মীদের কাছে পাননি। এ ছাড়া সারাদেশে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে গেলেও বাঁশখালী ছিল উপেক্ষিত। উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। যার কারণে সাধারণ লোকজনও নৌকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন।
তবে নৌকা কম ভোট পাওয়া নিয়ে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর সমকালকে বলেন, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। দলও দ্বিধাবিভক্ত ছিল। যার কারণে নৌকা কম ভোট পেয়েছে। নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করেন তিনি।
নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুরের অনুসারীদের মামলা নেওয়ায় বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন তিনি। গত ৫ জানুয়ারি তাঁর অনুসারীদের গ্রেপ্তার করলে ‘পুলিশের হাত কেটে নেওয়ার’ হুমকি দেন। সর্বশেষ নির্বাচন চলাকালে আটক হওয়া তাঁর অনুসারী পৌর কাউন্সিলরকে থানা থেকে ছাড়াতে এসে ওসিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের শেষ সময়ে এসে প্রার্থিতা হারান তিনি।