ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

যশোর-৬

দুই হেভিওয়েটকে হারিয়ে ২৮ বছর বয়সেই এমপি

দুই হেভিওয়েটকে হারিয়ে ২৮ বছর বয়সেই এমপি

আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজ

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২০:০৫

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে প্রার্থী হয়ে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন দুই হেভিওয়েট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি শাহীন চাকলাদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন। তাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে ছিলেন ২৮ বছর বয়সী আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজ।

বয়সে ছোট হওয়াসহ নানা কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল শুরুতে সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না। আগে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য। তবে এখন শুধু এলাকায় নয়, সারাদেশেই আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। দুই হেভিওয়েটকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। তিনি দেশের সর্বকনিষ্ঠ এমপি বলে জানিয়েছেন কর্মী-সমর্থকরা। আজিজুলও এমনটাই জানিয়েছেন। তাঁর এমন জয়ের নেপথ্য কারণ জানার চেষ্টা করছেন অনেকে।

গত রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজিজুল ইসলামের প্রতীক ছিল ঈগল। তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহীন চাকলাদারের ভোট ৩৯ হাজার ২৬৯টি। এইচ এম আমির হোসেন পেয়েছেন ১৭ হাজার ২০৯ ভোট। শাহীন চাকলাদারকে ৯ হাজার ৬৭৮ ভোটে হারিয়ে বাজিমাত করেছেন তিনি। জাতীয় পার্টির জি এম হাসান লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৬৪০ ভোট।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম মাত্র ২৭ বছর বয়সে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর জীবনে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। তখনও দুই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে কেশবপুর এলাকার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর পর যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়ে প্রশংসিত হন। জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর তিনি জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

২৮ বছর ৮ মাস ২৩ দিন বয়সে এমপি প্রার্থী হন আজিজুল ইসলাম। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯৯৫ সালের ১৫ এপ্রিল। তাঁর বাড়ি কেশবপুর পৌরসভার ব্রহ্মকাটি এলাকায়। তাঁর বিজয়ে তরুণ ভোটারদের অবদান বেশি বলে ধারণা স্থানীয়দের। যুব ও তরুণ কর্মীদের ‘স্থানীয় এমপি চাই’ স্লোগানও ভূমিকা রেখেছে।

যশোর-৬ আসন নানা কারণে ছিল আলোচনায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি মারা যান। পরে ১৪ জুলাই উপনির্বাচনে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। এবার অনেকের ধারণা ছিল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আমির হোসেনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাঁর। তবে ফলাফলে দেখা যায়, প্রয়াত ইসমাত আরার অনুসারী আজিজুলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। 

শাহীন চাকলাদার ও এইচ এম আমির হোসেনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কেশবপুরের ইউএনও মো. তুহিন হোসেন বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে সরকারের নির্দেশনা ছিল।

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলামের ভাষ্য, প্রয়াত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এখনও পরিবারটির জনপ্রিয়তা থাকায় তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জানা মতে দেশের মধ্যে আমার চেয়ে কম বয়সী কোনো প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হননি। সেই অনুযায়ী আমিই বয়সে সর্বকনিষ্ঠ এমপি।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, নির্বাচন অফিসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নবনির্বাচিত এমপির বয়স ২৮ বছর ৮ মাস ২২ দিন। সে ক্ষেত্রে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। এতে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন

×