ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মাশরুম চাষে কলেজছাত্র বছরে বিক্রি ৩০ লাখ টাকা

মাশরুম চাষে কলেজছাত্র বছরে বিক্রি ৩০ লাখ টাকা

শ্রমিকদের সঙ্গে মাশরুম প্যাকেট করছেন সাগর হোসেন। সমকাল

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২২:২৩

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র মো. সাগর হোসেন (২৫)। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর হোগলা গ্রামের কৃষক বাবু প্রামাণিকের ছেলে তিনি। তিন বছর আগে রাজবাড়ীতে মেসে থাকতেন। সেখানে শিক্ষিত বেকারদের হতাশার গল্প শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্বাবলম্বী হতে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন।
একপর্যায়ে টিভিতে মাশরুম চাষের ওপর একটি প্রতিবেদন দেখেন সাগর। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুব উন্নয়ন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর টিউশনির সঞ্চয় ও বাবার কাছ থেকে নেওয়া টাকায় ২০২১ সালে মাশরুম চাষ শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তরুণ এ উদ্যোক্তা কর্মচারী নিয়োগ করেছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে এলাকায় বেশ পরিচিতি পেয়েছেন সাগর। শুরুর দিকে সেভাবে সুবিধা করতে না পারলেও তিন বছরেই নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর উৎপাদিত মাশরুম ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করছেন। খরচ বাদে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ থাকছে। তাঁর মাশরুম সেন্টারে তিন থেকে পাঁচজন যুবক সারাবছর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাঁকে দেখে আগ্রহী হচ্ছেন আরও অনেকে।
জানা গেছে, শুরুর দিকে সাগরের মাশরুম চাষ দেখে অনেকে তাচ্ছিল্য করেছেন। তবে প্রথম বছরেই লাভের মুখ দেখেন। ২০২২ সালে মাশরুম বীজ উৎপাদনও শুরু করেন। এরপর বদলে গেছে তাঁর ভাগ্য। শীতের কয়েক মাসে এক থেকে দেড় হাজার কেজি মাশরুম উৎপাদন করছেন। এর বাজার মূল্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা। গরমের সময় মাসে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি উৎপাদন করেন; যার মূল্য ৯০ হাজার থেকে লাখ টাকা।
সাগর জানান, প্রতি কেজি মাশরুম উৎপাদনে খরচ হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। বিক্রি করছেন ২২০ টাকা কেজি দরে। মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বীজ বিক্রি করেন। সরেজমিন দেখা যায়, হোগলা গ্রামের একটি বাগানে টিনশেড ঘরে মাশরুম চাষ ও বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। সাগর কর্মচারীদের সঙ্গে মাশরুম প্যাকেট করছিলেন।
জমানো ৪৪ হাজার ও বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন সাগর। তাঁর ভাষ্য, বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করছেন। খরচ বাদে মাসে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ থাকছে। শ্রমিক তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। তিনিও বাড়িতে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে সফল উদ্যোক্তা হবেন।
যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের তদারকি ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুম আব্দুল্লাহ বলেন, পরিশ্রমী ও অদম্য ইচ্ছা থাকায় ছাত্রজীবনেই সাগর সফল মাশরুম চাষি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এতে স্বল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। কৃষি বিভাগ মাশরুম চাষ বৃদ্ধি ও বেকারদের কাজে লাগাতে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দিচ্ছে।
 

আরও পড়ুন

×