মধু বিক্রি নিয়ে বিপদে খামারি
সাদুল্লাপুরে সাদা মিয়ার মৌ খামারে কৃষি কর্মকর্তারা সমকাল
সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ | ২২:৩০
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার একমাত্র মৌ খামারি সাদা মিয়া। গত মৌসুমে বিভিন্ন স্থান ঘুরে ৪ হাজার ২৮০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছিলেন। বিক্রি হয়েছে ১০ লক্ষাধিক টাকায়। এর পরও লোকসান হয়েছে বলে দাবি তাঁর। তিনি বলছিলেন, মধু বিক্রির নির্ধারিত বাজার থাকলে আয় বাড়ত। এবারও বিক্রি নিয়ে সমস্যায় আছেন। চলতি মৌসুমে চার হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করতে চান তিনি।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ক্ষেত। হলুদ ফুলে মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্য। সরিষা ফুলে ঘুরছে মৌমাছি। সেখান থেকে আহরণ করছে মধু। সে মধু সংগ্রহ করলেও বিক্রির উপযুক্ত বাজার পাচ্ছেন না খামারি সাদা মিয়া। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরিষা ফুল থেকে এ পর্যন্ত উৎপাদন করা ২৮ মণ মধু বিক্রি নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এবার ১০০ বক্সে ২০ লাখ মৌমাছি নিয়ে মধু আহরণ করছেন সাদা মিয়া। এ জন্য সাদুল্লাপুরের ভাতগ্রাম, টিয়াগাছা, ভগবানপুর, পাকুরিয়া ও সদর উপজেলার ঘাগোয়া গ্রামে ঘুরেছেন। তাতে সংগৃহীত ২৮ মণ মধুর বেশির ভাগই অবিক্রীত। এবারও উপযুক্ত দাম না পাওয়ার আশঙ্কা তাঁর।
উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামের এ মৌ খামারির ভাষ্য, প্রতি কেজি মধু উৎপাদনে খরচ হয় ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। পাইকারি প্রতি কেজি ৩০০ টাকার বেশি বিক্রি হয় না। বিভিন্ন কোম্পানি মধু কিনে নেয়। কিন্তু তারা উপযুক্ত মূল্য দেয় না। কোম্পানিতে বিক্রি করলে জিম্মি থাকতে হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি করলে লোকসান হবে। অথচ তারা খোলাবাজার থেকে মধু কিনে লেবেল লাগিয়ে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের মধু কিনে খাওয়ার প্রবণতা কম। যাদের প্রয়োজন হয়, তারাই কেনেন। ফলে মধু বিক্রির জন্য বেছে নিতে হয় কৃষি ও বাণিজ্য মেলাসহ অন্যান্য উপলক্ষ। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে মেলা বসেনি। ফলে মধু বিক্রিতে সমস্যা বেড়েছে। সাধারণ বাজারেও খুচরা গ্রাহক কম থাকায় তেমন বিক্রি হয় না। অনলাইনে কিছু মধু বিক্রি হলেও ক্রেতা কম।
কৃষি বিভাগ সহায়তার আশ্বাস দিলেও সহযোগিতা করে না জানিয়ে সাদা মিয়া বলেন, বাজারজাতের ব্যবস্থা থাকলে এ খাতে উন্নতি সম্ভব। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ জরুরি। এদিকে ফুলে মৌমাছির পরাগায়নে সরিষার ফলন বাড়ে বলে মত অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়ার। তিনি বলেন, মৌমাছি থাকলে ক্ষতিকর পোকা আসবে না। পরিবেশে ভারসাম্য বজায় থাকবে। শস্য উৎপাদনে বেশি বেশি মৌ খামার প্রয়োজন।
মৌ খামারির তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় চিনি খেয়ে বাঁচে মৌমাছি। বছরে সাত মাস চিনি কিনতে হয়। এখন প্রতি কেজি চিনি ১৫০ টাকা। এতে ব্যয় বাড়ছে। এ বিষয়ে উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রব সরকার বলেন, যে সময়টা মধু উৎপাদন হয় না, তখন মৌমাছিকে খাবার হিসেবে চিনি দিতে হয়। বছরে অন্তত ছয় থেকে সাত মাস চিনি কিনতে হয় খামারিদের।
সাদা মিয়ার জন্য ‘মধু রিফাইন মেশিনের’ আবেদন করা হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম। বরাদ্দ এলে বাড়তি মধু উৎপাদন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, উপযুক্ত মূল্যে বাজারজাত করতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে ন্যায্যমূল্য পাবেন।