- সারাদেশ
- '১১ বছর ধইরা মাইয়ার হত্যার বিচার চাই, কিন্তু পাই না'
'১১ বছর ধইরা মাইয়ার হত্যার বিচার চাই, কিন্তু পাই না'

ফেলানীর কবরের পাশে বাবা নুরুল ইসলাম নূরু ও মা জাহানার বেগম। ছবি-সমকাল
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারি গ্রামের বাড়িতে দোয়া মাহফিল ও কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
১১ বছরেও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে ফেলানীর বাবা বলেন, ‘১১ বছর ধইরা মাইয়ার হত্যার বিচার চাই। কিন্তু বিচার পাই না। কনে যামু! কার কাছে কমু! ভারত, বাংলাদেশ—দুই দ্যাশের সরকারের কাছে অনুরোধ, ফেলানী হত্যার বিচারটা করেন।’
বছরের পর বছর ধরে মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে ফেলানীর মা জাহানারা বেগমও হতাশ। তিনি বলেন, এমনভাবে কেউ যেন তার সন্তানকে না হারায়। সীমান্তে একটি পাখিও যেন বিএসএফের হাতে মারা না যায়। মেয়েকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললেও এখন ন্যায়বিচার তাদের কিছুটা স্বস্তি এসে দিতে পারবে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারি গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে ফেলানী। বাবার হাত ধরে ভারতের বঙ্গাইগাঁও গ্রাম থেকে বাংলাদেশে কলোনীটারির বাড়িতে আসার পথে ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারায় কিশোরী ফেলানী।
প্রায় চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। সেই ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজর কারে।

দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে ঘটনার আড়াই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফর সদর দপ্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ফেলানীর বাবা ও মামার স্বাক্ষ্য শেষে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় কোর্ট।
এ রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। রায় প্রত্যাক্ষান করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম পুনরায় বিচার চেয়ে ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে করা আবেদন ১৩ সেপ্টেম্বর রিভিশন ট্রায়াল ঘোষণা করে। পুনরায় বিচারিক কার্য শেষে ২০১৫ সালের ২ জুলাই বিএসএফের আধিকারী সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক প্যানেলের রায়ে আবারও খালাস পায় অমিয় ঘোষ।
সে রায়ের বিরুদ্ধে ফেলানীর বাবা ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেন। কিন্তু ওই বছরের ১৩ জুলাই রিট গ্রহণ করলেও শুনানি দুইবার পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি পর আর কোনো কার্যাদেশ নেওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন