
সাদা বক আর কালো পানকৌড়ির নিরাপদ আশ্রয়স্থল দিনাজপুরের বলিহর গ্রাম - সমকাল
সাদা বক আর কালো পানকৌড়ি। বলিহরপুর গ্রামের মানুষের এখন প্রতিদিন ঘুম ভাঙে এদের কিচিরমিচির ডাকে। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামে এদের কলতানে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রামটির গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় ফুটে আছে সাদাকালো ফুল।
সাত বছর ধরে শীত এলেই এসব পাখি আসে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এ গ্রামটিতে। মহাসড়কের পাশে আলাদিপুর ইউনিয়নের এ গ্রামের মানুষের কাছেও এসব পাখি হয়ে উঠেছে পরিবারেরই সদস্য। গ্রামের গাছের ডালে আর বাশঝাঁড়ে আবাস গড়ে এসব পাখি। শীত মৌসুমে নিরাপদ প্রজননের জন্য এ গ্রামটিকেই বেছে নিয়েছে তারা।
ভোর না হতেই কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে পাখিগুলো বেরিয়ে পড়ে সারাদিনের জন্য। সন্ধ্যায় মা পাখি ফিরে না আসা পর্যন্ত গ্রামের মানুষই নিরাপত্তা দিয়ে থাকে এদের বাসা, ডিম ও বাচ্চাদের। তবে এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে পাখিগুলো।
গ্রামবাসী সুবাস চন্দ্র রায় ও দীনেশ চন্দ্র রায় বলেন, গ্রামটিকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে 'পাখি প্রজনন কেন্দ্র' হিসেবে ঘোষণা করা হলে পাখির প্রতি গ্রামবাসীর নৈকট্য আরও বাড়বে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বলিহরপুরের একটি খালের পাশে বাঁশঝাড় ও জঙ্গি গাছের ডালে বসে আছে অসংখ্য বক ও পানকৌড়ি। প্রতিবছর বাংলা বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে আসতে থাকে তারা। ভাদ্র মাসে চলে যায় প্রজনন শেষে বাচ্চাগুলো বড় হওয়ার পর। প্রায় পাঁচ মাস তারা এখানে থাকে। নদী-নালা, খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে নানা জাতের মাছ, পোকামাকড় ও শামুক-ঝিনুক খেয়ে থাকে এই পাখিগুলো।
ফুলবাড়ী শহর থেকে বলিহরপুরে পাখি দেখতে আসা ডা. মাহাফুজ আলম, মোকাররম হোসেন ও অধ্যক্ষ আহমেদুর চৌধুরী বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য এখন দেখতে পাওয়া ভীষণ কঠিন। সকাল ও সন্ধ্যায় হাজারো পাখির কলকাকলির এই শব্দ অন্য রকম এক আবহ তৈরি করে। খুব ভালো লাগে আমার। প্রায়ই এখানে পাখি দেখতে চলে আসি। পাখির প্রতি এই গ্রামের লোকজনের ভালোবাসার তুলনা হয় না।
বাঁশঝাড়ের মালিক নলিন চন্দ্র সরকার বলেন, সাত বছর ধরে কেবল তার নয়, গ্রামের আরও অনেকেরই বাঁশঝাড় ও গাছে সাদা বক ও কালো পানকৌড়িগুলো এসে বাসা বাঁধে। আমাদেরও খুব ভালো লাগে এতে। ফুলবাড়ী থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদের নিয়ে আলোচনাও করেছে। এই পাখিগুলো যেন শিকারিরা এসে না মারে কিংবা বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সচেতন করে গেছেন। শিকারিরা এসে পাখি মারলে কিংবা বিরক্ত করলে তাদের খবর দিতে বলে গেছেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরীসহ স্থানীয় শিক্ষক আনোয়ার সাদাত ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুরুল্লাহ বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় পাখিগুলো খাবার সংকটে পড়েছে। বক ও পানকৌড়ির প্রধান খাবার মাছ। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং জমিতে পানি জমে না থাকায় মাছসহ অন্যান্য পোকামাকড় তেমন পাচ্ছে না পাখিগুলো। এগুলোর জন্য সরকারিভাবে খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো আরও বেশি প্রজনন হতো।
বন বিভাগের উপজেলা বিট কর্মকর্তা আবদুল হাই জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখির অভয়াশ্রমের নিরাপত্তায় সব সময় খোঁজখবর রাখা হয়। তবে এসব পাখি রক্ষার্থে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন