
রাজধানীর পুরান ঢাকায় শুক্রবার সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি নিয়ে খেলছেন স্থানীয়রা- ফোকাস বাংলা
পুরান ঢাকার চিরনতুন আকাশ গতকাল শুক্রবার ছিল ঘুড়িদের দখলে। শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকেলে এখানকার আকাশজুড়ে গোত্তা খাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে কাটাকাটি খেলায় লোকজন ছিল উত্তেজিত, উল্লসিত। কাটাকাটি খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাঁধন ছিঁড়ে উড়ে চলে গেছে দূরে। তা দেখে ব্যথিত হয়েছে ঘুড়িওয়ালা, কিন্তু ব্যথা ছাপিয়ে উল্লাসের ধ্বনিও বেজেছে চারপাশে।
পৌষসংক্রান্তিতে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবে গতকাল অবশ্য উপেক্ষিত হয়েছে কভিডজনিত পরিস্থিতিতে পালনীয় নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি। মানুষের সহজাত আনন্দ-উল্লাসকে উপেক্ষা করা যায় না বলেই হয়তো মানুষ কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়ে এসেছিল বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে। প্রতিটি বাড়ির ছাদ ও অলিগলিতে সাকরাইন পালন করেছে পুরান ঢাকাবাসী। সাকরাইনের এ উৎসবে এবার বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে গানবাজনার তালে তালে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর খেলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা উৎসবে মুখরিত হতে থাকে। বাড়তে থাকে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যাও।
১৭৪০ সালের দিকে মোগল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি ওড়ানোর দিনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে সাকরাইন একটি উৎসব ও আমেজে পরিণত হয়েছে। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরান ঢাকার সব বাসিন্দা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সারাদিন আকাশে নানান রঙের হাজার হাজার ঘুড়ি উড়িয়েছেন পুরান ঢাকাবাসী। পঙ্খীরাজ, চোখদার, বোয়াদার, গায়েল, নাখপান্দার, নোমাইলদার, বলদার, পেটকাদার, মাছরাঙা, টেক্কা, গরুশিং, রগগুড্ডি, পল্গাস্টিক ঘুড়িসহ নানা নামের ঘুড়ি নিয়ে ছোট থেকে বড় সবাই শখের বশে ঘুড়ি উড়িয়েছেন সারাদিন। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার আশপাশে অলিগলিতে বিভিন্ন ঘুড়ির দোকান ও মেলা বসেছে। মেলায় ঘুড়ি ৬ টাকা থেকে ২০ টাকা, সুতোর বান্ডিল ছোট ৮০ টাকা বড় ৪০০ টাকা, নাটাই বাঁশের ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, স্টিলের ৫০০-৬০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বংশাল, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ধোলাইখাল এলাকায় মানুষ সারাদিন ঘুড়ি উড়িয়েছেন। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নানা খাবার এবং পিঠা-পুলিও মিলেছে গতকাল। দিনের শেষে সূর্য ডুবতেই পুরান ঢাকার রাতের আকাশে হাজার হাজার ফানুস ও আতশবাজি ফুটতে দেখা গেছে। কোনো কোনো বাড়ির ছাদে গানবাজনা, নৃত্য এবং ডিজে পার্টিও হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় পৌষের শেষে জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। সব বাড়ির জামাই ঘুড়ি ওড়ালে ঘটা করে সেসব দেখতেন সবাই। তবে এমনটা এখন আর হয় না। তবু ঘুড়ি উড়ানো পৌষবিদায়ী উৎসবের অংশ হয়ে আছে।
ডিজে পার্টিতে অতিষ্ঠ মানুষ: সাকরাইন উৎসবে বাড়ির ছাদে অনেকে উচ্চ শব্দে গান ও ডিজে পার্টির আয়োজন করেছে। এতে উৎসবের আনন্দ নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অন্নমা নাসুহা নুহিন সমকালকে বলেন, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে উচ্চ শব্দের গানের কারণে পড়তে পারছি না। বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসে এসে বসে আছি। কেউ কেউ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক ফিরোজ আলী বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই শব্দদূষণের অভিযোগ পাচ্ছি। অনেককে গিয়ে বুঝিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন