- সারাদেশ
- দেশে নতুন করে ২৩ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত
দেশে নতুন করে ২৩ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত

জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটে টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। ছবি-ফোকাস বাংলা
সারাদেশে আরও ২৩ জন করোনার অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন।
গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিএসএআইডি)-তে রোববার রাতে এই তথ্য আপডেট করা হয়েছে। নতুন ২৩ জনকে নিয়ে বাংলাদেশে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে আক্রান্ত ২৩ জনের মধ্যে পুরুষ ১২ জন, নারী ১১ জন। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৪ জন উত্তরার, ২ জন বাসাবোর, ৪ জন চাঁনখারপুলের ও ১৩ জন মহাখালীর বাসিন্দা।
এর আগে বুধবার পর্যন্ত মোট ৩৩ জনের ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানিয়েছিল জিআইএসএআইডি; যাদের ৩০ জনই ছিলেন ঢাকার। বুধবার প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে তিনজনের ওমিক্রন রোগী শনাক্তের খবর আসে। ওইদিন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নমুনা সংগ্রহের পর তাদের জেনোম সিকোয়েন্স করে ওমিক্রনে আক্রান্তের কথা জানায।
এর আগে দেশে গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খবর সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল। এরপর
২৭ ডিসেম্বর একজন, ২৮ ডিসেম্বর চারজন, ৩১ ডিসেম্বর তিনজন, ৬ জানুয়ারি ১০ জন, ৭ জানুয়ারি একজন, ১০ জানুয়ারি নয় জন এবং ১২ জানুয়ারি তিনজনের শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের তথ্য আসে জিআইএসএআইডির ওয়েবসাইটে।
করোনাভাইরাসের এ নতুন ধরনে ঢাকার বাসাবো এলাকায় প্রথম শনাক্তের খবর আসে। পরে বনানী ও মহাখালীতে রোগী পাওয়া যায়। ঢাকার বাইরে যশোরে ওমিক্রন শনাক্তের পর ঢাকার চাঁনখারপুল ও উত্তরায় মিলেছে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী।
এদিকে বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে।
মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন, বিসিপিএস ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মালেক সেদিন বলেন, দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ১৪৪ জনের মৃত্যু হল। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ২২২ জন। এতে দেশে শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৭১১ জনে।
দেশে বর্তমানে সংক্রমিত রোগীর ৮০ শতাংশই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। গত বছরের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রোগী বৃদ্ধির পর এ চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায়ও একই চিত্র পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ডেলটা ও ওমিক্রন- দুই ধরনেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ওমিক্রন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সংক্রমণ হয়তো আরও অনেক বেড়ে যাবে। তারা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে ওমিক্রন সংক্রমণের চিত্র দেখলে বলা যায়, এটি অধিক সংক্রমণপ্রবণ। সুতরাং সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
দেশে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্যের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এরপর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়।
ওমিক্রনের লক্ষণ-উপসর্গ
যুক্তরাজ্যে জো কভিড স্টাডি অ্যাপ হাজার হাজার ওমিক্রন আক্রান্তকে তাদের লক্ষণ-উপসর্গ জানাতে বলেছিল। গত ৩ থেকে ১০ ডিসেম্বর ওমিক্রন সংক্রমিত ব্যক্তিরা ওই অ্যাপে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, ওমিক্রন আক্রান্ত হলে জ্বরের পাশাপাশি হাঁচি, কাশি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তির মতো উপসর্গ থাকতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ওমিক্রন নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের গবেষণা ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো ঘেঁটে জানা যায়, ওমিক্রনের উপসর্গগুলো প্রধানত জ্বরের পাশাপাশি ঠান্ডা লাগা, সর্দি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, হাঁচি। এ ছাড়া ত্বকে দাগ, ঠোঁট নীল ও শরীরে চুলকানি, হঠাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, বুকে ব্যথা অনুভব করা, শরীর ক্লান্ত লাগা, শয্যা থেকে উঠতে সমস্যা, কোমরের নিচের অংশে যন্ত্রণা, রাতে ঘুমানোর সময় ঘামতে থাকা- এসব লক্ষণ-উপসর্গ থাকলে ওমিক্রন হতে পারে। কারও শরীরে এসব লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করান। পজিটিভ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন।
মন্তব্য করুন