- সারাদেশ
- একই স্কুলে ৬ জনসহ যশোরে প্রাথমিকের ১৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত
একই স্কুলে ৬ জনসহ যশোরে প্রাথমিকের ১৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত

প্রতীকী ছবি
যশোর জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ১৬ জন শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে এক স্কুলেই ৬ জন শিক্ষকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত এসব শিক্ষকরা বর্তমানে বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, জেলায় ইতোমধ্যে ১৬ জন শিক্ষকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যে সব শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন; সবাই দুই ডোস টিকা গ্রহণ করেছিলেন।
শিক্ষা অফিসার অহিদুল আলম আরও বলেন, শিক্ষকরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিললেও কোনো শিক্ষার্থীর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হলে কী করতে হবে সে ব্যাপারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হতে বা কোনো গুজবে কান না দিতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সংক্রমিত ১৬ শিক্ষকের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৪ জন আর অপর দুই জনের মধ্যে একজন শার্শায়, অন্যজন অভয়নগর উপজেলায়। এক স্কুলে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যশোর শহরতলী সদরের বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ জন সহকারী শিক্ষক। এই বিদ্যালয়ে প্রথমে করোনা আক্রান্ত হন সহকারী শিক্ষক তানিয়া জামান তমা। তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে চলতি মাসের ১০ জানুয়ারি যশোর জেনারেল হাসপাতালে নমুনা দেন। ১৩ জানুয়ারি খবর পান তিনি করোনা পজিটিভ। করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ওই দিন একই স্কুলের ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ শিক্ষক কানিজ ফাতেমা, হোসনে আরা, সুতপা রাণী, সামছুন্নাহার সালমা ও জিনজিরা খাতুন নমুনা দেন। এরপর ১৫ ও ১৭ জানুয়ারি নমুনা দেওয়া সবারই করোনা শনাক্ত হয়। তবে বাকি শিক্ষকরা সুস্থ থাকায় করোনা পরীক্ষা করেননি বলে জানিয়েছেন স্কুলটি প্রধান শিক্ষক।
এ ছাড়া ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সদর উপজেলার শহীদ স্মরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দিল আফরোজ নার্গিস, হালসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিতা রাণী মজুমদার, মেঘলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুর জাহান আক্তার, নালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়ালিউর রহমান, মনোহরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুসাইরা সোহেলী, নুতন উপ শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিনা জেসমিন, নীমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদ হাসান হিরা, চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা সুলতানা। অভয়নগর উপজেলার মধ্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহানারা শিউলী ও শার্শা উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার। করোনা আক্রান্তরা সবাই বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন।
সদরের বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, তার বিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষকদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে তিন শিক্ষকের অবস্থা কিছুটা খারাপ। বাকিরা সুস্থ আছেন। শিক্ষকরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার সৃষ্টি করেছে। আমি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। শিক্ষকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ক্লাসে উপস্থিতির হার কমে নেমে এসেছে ১৫-২০ শতাংশে। আমরা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। যে সব শিক্ষার্থী স্কুলে ক্লাস করতে আসছে তাদের সুস্থ শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত শার্শার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, আমি এখন কিছুটা সুস্থ আছি। আমার স্কুলে ৪ জন সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আর একজন সম্প্রতি অবসরে গেছেন। বাকি দুই জন শিক্ষক প্রায় আড়াইশ’ জন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। আমি করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে ক্লাসে কিছুটা উপস্থিতির হার কমেছে।
এদিকে, যশোরে এক স্কুলেই ৬ জন শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের ভয় করছেন অভিভাবকরা। ফলে স্কুল খোলার পর উপস্থিতি ৯০-৯৫ শতাংশ থাকলেও এখন অনেক স্কুলে ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে।
মোশাররফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তিনি তার সন্তানদের আপাতত স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা না দিয়ে স্কুল খোলা বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি।
প্রসঙ্গত, জেলায় ৮টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৮৯টি। এসব বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত সকল ৪ হাজার ৪০০ শিক্ষকদের করোনা টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
মন্তব্য করুন