রাজধানী ঢাকার মতোই পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর রংপুরবাসী। সরকারই এ জেলার মানুষকে এমন স্বপ্ন দেখিয়েছে। এ নিয়ে কিছু কাজও শুরু হয়েছিল। তবে তাতে ধীরগতির কারণে বহুল প্রতীক্ষিত গ্যাস নিয়ে স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় প্রাচীন এ জেলায় ভারী শিল্প ও কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করাসহ রংপুরে শিল্পনগরী ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর সফরকালে এ অঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন। উত্তরাঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য বগুড়া থেকে রংপুর-নীলফামারী পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একনেক সভায় 'রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এটি বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয় ২৫৮ কোটি টাকা। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে বগুড়া জেলা পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ রয়েছে যা বর্ধিত করে নীলফামারী ইপিজেড পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। রংপুর ও নীলফামারীতে ১০২টি শিল্পকারখানায় কম দামের এ জ্বালানি সরবরাহ করা হবে।

প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমে রয়েছে ১০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপন, ৭ একর জমি অধিগ্রহণ, পাইপলাইনের রুট সার্ভে ও ৩টি আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয় নির্মাণ। নীলফামারী ও রংপুরে নির্মাণাধীন ২৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুকেন্দ্রেও গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে ধীরগতি।

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন সমকালকে জানান, 'শুনেছি বগুড়া ও রংপুরের কিছু অংশে জমি অধিগ্রহণ চলছে। কবে নাগাদ রংপুরে গ্যাস আসবে বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্যাস সরবরাহের মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। আমরা চাই দ্রুত রংপুরে গ্যাস সরবরাহ করা হোক। এতে উদ্যোক্তারা শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারবেন। রংপুরের আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।'

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু সমকালকে বলেন, বর্তমানে জমি অধিগ্রহণ চলছে। রংপুরের হাজীরহাট ও লাহিড়ীরহাট এলাকায় কিছু পাইপও মজুদ করা হয়েছে। এ পাইপ দিয়ে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না বলে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে। রংপুরে গ্যাস এলে কৃষিভিত্তিক অনেক কলকারখানা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে। তবে সরকার রংপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পনগরী গড়ে তোলার কোনো পরিকল্পনা নেয়নি। এ ছাড়া কৃষিজমিতে কলকারখানা স্থাপনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে গ্যাস এলেও ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা এর সুবিধা কতটুকু নিতে পারবে এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা সমকালকে বলেন, জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জমি হস্তান্তর বাকি রয়েছে। এক বছরের মধ্যে রংপুরে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।