যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের বিচারক পদে মনোনীত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত জাহান চৌধুরী ফেনীর মেয়ে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রেই। তবে নাড়ির টান ভোলেননি তিনি। তাই মাঝেমধ্যেই ছুটে আসেন পৈতৃক ভূমিতে। এদেশের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। দেশে এলেই এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরতে পছন্দ করেন তিনি। তার স্বজনরা সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

নুসরাতের পৈতৃক নিবাস ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দক্ষিণ আলীপুর গ্রামে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার ৪৪ বছর বয়সী এই আইনজীবীকে বিচারক মনোনয়ন দিয়েছেন। এ পদে তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি-আমেরিকান ও প্রথম মুসলিম আমেরিকান নারী। তিনি নাগরিক অধিকার সংস্থা আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নে কর্মরত ছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নিউইয়র্ক পুলিশের নজরদারি চ্যালেঞ্জ করাসহ অসংখ্য নাগরিক অধিকারের মামলায় লড়েছেন নুসরাত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ল স্টু্কল, প্রিন্সটন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। নুসরাতকে নিয়োগ দিতে ২০২১ সালের আগস্টে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে সুপারিশ করেন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতা চাক শুমার।

নুসরাতের চাচাতো ভাই অপু চৌধুরী জানান, তার বাবা ডা. নুরের রহমান চৌধুরী স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ড পড়তে যান। পরে ১৯৬০ সাল থেকে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি নিউরোজলিস্ট ছিলেন। আমেরিকাতেই জন্মগ্রহণ করেন নুসরাত। ২০১১ সালে তার বাবা আমেরিকায় মৃত্যুবরণ করেন। নুসরাতের চাচা মঞ্জুর চৌধুরী জানান, ওই পরিবারের সবাই আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা।

স্বজনরা জানান, তাদের গ্রামের বাড়িটি পরিপাটি করে রাখা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে নুসরাত বাংলাদেশে আসেন। এরপর করোনার কারণে তার দেশে আসা সম্ভব হয়নি। নুসরাতের চাচাতো বোন সাজেদা চৌধুরী বলেন, এই পরিবারের শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। তার দাদা পাকিস্তান আমলে ৩ যুগ ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট (তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান) ছিলেন। তাদের চাচা মজিবুর রহমান পেয়ারা মানবকল্যাণ সোসাইটি ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

নুসরাত বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। তার দুই ভাই আরিফুর রহমান চৌধুরী ও সাইফুর রহমান চৌধুরী আমেরিকায় বসবাস করেন। তাদের পরিবারের অনেকে বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। নুসরাত আমেরিকার বিচারক নিযুক্ত হওয়ায় তার পরিবারে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। চাচাতো বোন সাজেদা চৌধুরী জানান, তার এই সাফল্যে তাদের পরিবার দারুণ উল্লসিত। তারা একে দেশের সম্মান ও তাদের পরিবারের গৌরব হিসেবে দেখছেন।

এদিকে, আমেরিকার ফেডারেল আদালতের প্রথম মুসলিম বিচারক নুসরাতকে নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমও আগ্রহ দেখাচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, তার বয়স ৪৪ কিংবা ৪৫ বছর। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন সক্রিয় নন।

২০১৬ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্ক টাইমসে নুসরাত ও তার স্বামীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, প্রেম করেই মাইকেল আলেকজান্ডার আর্লিকে বিয়ে করেন নুসরাত। তারা কাছাকাছি বয়সের। হিঞ্জ নামে একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। মাইকেল বলেন, নুসরাত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন জানতে পেরে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী নারী। নুসরাত তার স্বামী সম্পর্কে বলেন, মাইকেল অত্যন্ত উষ্ণ হৃদয়ের। তাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে তারা ভালোবাসার মানুষের ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করেন।