নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচনের পর্দা নামলেও থেমে নেই ভোট-পরবর্তী সমীকরণ। নির্বাচন ঘিরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তৈমূর আলম খন্দকার ও এ টি এম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করে বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে তৈমূরের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদও কেড়ে নেওয়া হয়। এ দুই নেতার বহিস্কার নিয়ে জেলা বিএনপিতে রয়েছে মতভেদ। বিএনপির একটি অংশ এই সিদ্ধান্তকে দলটির দ্বিমুখী আচরণ হিসেবে দেখছে।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল বহিস্কার করে তৈমূরকে। আর তৈমূরের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে থাকায় দল থেকে বহিস্কার করা হয় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে। দলে পদ-পদবি থাকার পরও যারা নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দলের সুস্পষ্ট অবস্থান কী হবে- সে বিষয়ে জানতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (৭, ৮ ও ৯) দু'বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা বলেন, নাসিক নির্বাচনে বিএনপির নেতা হয়েও যারা প্রকাশ্যে নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন, কেন্দ্র তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে- আমরা তা জানতে চাই। মেনে নিলাম তৈমূর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেননি। তাই তার পক্ষে আপনারা নামেননি। কিন্তু নৌকার পক্ষে সরাসরি ভোট চাওয়ার অনুমতি আপনাদের কে দিয়েছে? যারা নির্বাচনে সরাসরি নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন, আশা করি তাড়াতাড়ি কেন্দ্র তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

জানা যায়, নাসিক নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে ১০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে দু'জনসহ মোট ১২ জন বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত চারজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা সুলতান উদ্দিন ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউসার আশা রয়েছেন। এ ছাড়া ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গত দু'বারের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা হান্নান সরকার এবারের নির্বাচনে হেরে গেলেও তিনিও আইভীর জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন।

৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও তার বাবা বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। বাবার কারণে স্থানীয়রা তাকে বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর হিসেবেই চেনে। নির্বাচনে প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণায় গেলে সাদরিল সেই প্রচারণায় উপস্থিত থেকেছেন এবং তার কর্মীরা 'আইভী আপার নৌকা, সাদরিল ভাইয়ের নৌকা' স্লোগান দেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আরেক সাবেক এমপি আবুল কালামের ছেলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা গোপনে নিজের ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

এ ছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম, ২১ নম্বরে বিএনপি নেতা হান্নান সরকার, ২২ নম্বরে সুলতান উদ্দিন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

মহানগর বিএনপির সদস্য ও এই নির্বাচনে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান সরকার বলেন, গত ১০ বছর সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে কাজ করেছি। এ জন্য তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া তৈমূর আলম তো বিএনপির প্রার্থী ছিলেন না। সে জন্য নৌকার হয়ে ভোট চেয়েছি। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া কতটা সমীচীন- এই প্রশ্নে হান্নান সরকার বলেন, বিএনপির প্রার্থী থাকলে হয়তো এমনটা করতাম না।

২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা বলেন, আমি নৌকার পক্ষে ভোট চাইনি। এটা গুজব ছিল। নির্বাচনে জয়ের দু'দিন পর মেয়র আইভীর পা ছুঁয়ে সালাম করার একটা ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি মুরব্বি মানুষ, এ জন্য সালাম করেছি। তবে নৌকার পক্ষে ভোট চাইনি।