- সারাদেশ
- সাংবাদিক শিমুল হত্যা: পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি বিচার
সাংবাদিক শিমুল হত্যা: পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি বিচার

সমকাল সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারিক কার্যক্রম এখনও ঝুলে আছে উচ্চ আদালতে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিদের উদ্যোগের অভাব, বিচারিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা ও আসামিপক্ষের নানা চতুরতায় বিচারিক কার্যক্রম পাঁচ বছরেও শুরু করা যায়নি বলে অভিযোগ শিমুলের পরিবার ও সহকর্মীদের।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় ছবি তুলতে গিয়ে তৎকালীন মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন শিমুল। গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়া থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে পরদিন তিনি মারা যান।
শিমুল হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার খাতুন সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৩৮জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তবে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
নুরুন্নাহার খাতুন বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের আলোচিত মামলার রায় যদি ২০ মাস পরেই হতে পারে, তাহলে আমার স্বামী সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার বিচার কেন পাঁচ বছরেও সম্পন্ন হচ্ছে না? বিচার তো দূরের কথা এখনও মামলার চার্জ গঠন হয়নি।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘খুনি মিরুসহ সকল আসামিরা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সব সময়ই সংশয়ে থাকি। শেষ পর্যন্ত স্বামী খুনের বিচার পাব কি-না, এ নিয়েও আমি সন্ধিহান। তাই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য সর্বশেষ আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমরা সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যুর পর স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন ব্যক্তিগত খরচে শিমুলের পরিবারকে গৃহনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।মাদলা গ্রামে শিমুলের কবর পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি শিমুলের পরিবারকে সরকারি খাস জমি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি এসেছিল, দিলরুবা বাসস্টপ থেকে মাদলা গ্রাম অভিমুখে গ্রামীণ সড়কটি শিমুলের নামে নামরকরণ করা হবে।
কিন্তু নুরুন্নাহার খাতুন জানান, প্রয়াত মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বদান্যতায় তিনি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে চাকরি পেলেও বাকি প্রতিশ্রুতির কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।
শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুমার কুন্ডু বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় সহকর্মী হিসেবে আমরাও গভীর উদ্বিগ্ন ও হতাশ।’
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, ‘সমকালের প্রয়াত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের নামে কোনো রাস্তার নামকরণের প্রস্তাবনা এখনও আমাদের বরাবর আসেনি।’
উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ অধ্যাপক আজাদ রহমান বলেন, ‘কবর পাকা করণের প্রতিশ্রুতি দেয়া থাকলে অবস্যই সেটি বাস্তাবায়ন করা উচিত। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমার জানা নেই।‘
পোতাজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী বলেন, ‘কবর পাকা করার বিষয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি।’
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘এসব প্রতিশ্রুতির বিষয়ে আমি নিজে সংশ্লিষ্ট ইউএনওর সাথে কথা বলব।’
শাহজাদপুর প্রেসক্লাব আগামী বৃহস্পতিবার শিমুল স্মরণে নানা আয়োজন রেখেছে।সেদিন সকালে প্রেসক্লাব চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ কর্মসূচি রয়েছে তাদের।
এছাড়াও সকাল ১১টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পৌর এলাকায় শোক র্যালি এবং বাদ জোহর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছেন তারা। শিমুলের সহকর্মী, পরিবার ও শিমুল স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে মাদলা গ্রামে।
মন্তব্য করুন