দিনের পর দিন স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সাথী আক্তার (২৪) বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। সারাদেহে অসংখ্য নির্যাতনের ভয়াবহতা নিয়ে শুধুই চোখের জল ফেলছেন। কেউ কথা বললে সাড়া দিচ্ছেন না। খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ।

সাথীর পরিবারের দাবি, ভয়াবহ নির্যাতনের পাশাপাশি নানা গাছগাছড়ার ওষুধ খাইয়ে তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর শহর সংলগ্ন অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ধুলদী গোবিন্দপুর গ্রামে।

স্থানীয় গ্রামবাসী, থানা পুলিশ ও গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ বছর আগে ভালোবেসে প্রতিবেশী রাজু আহমেদকে বিয়ে করেন বারেক শেখের মেয়ে সাথী আক্তার। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল রাজু-সাথীর সংসার। কিন্তু কয়েক বছর যেতেই স্বামী রাজুর আসল রূপ ধরা পড়ে সাথীর কাছে। যৌতুকলোভী স্বামী নানাভাবে নির্যাতন চালায় তার ওপর।

সাথীর দরিদ্র বাবা-মা ধার-কর্জ করে দুই লাখ টাকা তুলে দেন রাজুর হাতে। কিন্তু কয়েক দিন পর ফের ৫ লাখ টাকা দাবি করে রাজু। টাকা না দেওয়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখে রাজু ও তার বাবা-মা।

এরই মধ্যে সাথীর কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। সেই সন্তানের বয়স এখন প্রায় ৪ বছর। অবুঝ সন্তানটিকেও কেড়ে নেওয়া হয়েছে মায়ের কাছ থেকে। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় সাথীর ওপর চলতে থাকে ভয়াবহ নির্যাতন।

দেহের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছ্যাঁকাসহ মারধরের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে অসহায় এ গৃহবধূ। দেহের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর সাথীর ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে সাথীর বাবা-মা ছুটে যান জামাইবাড়িতে। পরে জামাই ও তার স্বজন এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে সাথীর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করেন।

কিন্তু সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনে মারাত্মক আহত অবস্থায় সাথীকে তার মা-বাবাসহ স্থানীয়রা স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসার পর অর্থাভাবে সম্প্রতি তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার বাবা।

ধারাবাহিক নির্যাতন সইতে না পেরে সাথী এখন মারাত্মক অসুস্থ ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এখন কোনো কথাই বলতে পারেন না সে। চোখ থেকে শুধু জল ঝরছে। খাওয়া-দাওয়া এক প্রকার বন্ধ। বর্তমানে বাড়িতেই চলছে সাথীর চিকিৎসা।
মেয়ের এমন দুর্দশায় সাথীর মা নুরজাহান বেগমের কান্না থামছে না। তিনি বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার পর সাথীর স্বামী রাজু আহমেদসহ তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। তিনি মেয়ের ওপর নির্যাতনকারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
সাথীর বাবা বারেক শেখ জানান, তিনি একটি তেলের পাম্পে অল্প বেতনে চাকরি করেন। ফলে জামাইয়ের যৌতুকের আবদার মেটাতে পারেননি। এ কারণে তার মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
সাথীর ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন সেই সালিশের সিদ্ধান্ত মানেনি।

সালিশে উপস্থিত থাকা কয়েকজন এমন অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হলে হত্যাসহ তাদের গ্রামছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল বলেন, সাথীর ওপর নির্যাতনের মামলার বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।