রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় পাহাড় কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে মাটি। পাহাড়ি বন ধ্বংস করে কাঠও যাচ্ছে ওই ভাটাগুলোর ইন্ধন জোগাতে। এতে সবুজ পাহাড় হচ্ছে বিরান। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে বড় ধরনের পরিবেশের বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বোবা পাহাড়ের কান্নায় পাহাড়খেকোদের মন না ভেজা স্বাভাবিক। তবে পাহাড়ের কান্না থামাতে প্রশাসনের নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।

তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। তবে রাঙামাটিতে অবৈধ ইটভাটা চলছে বিনা বাধায়। তাই বন্ধও হচ্ছে না পাহাড় কাটা।

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ও বেতবুনিয়া ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে ১০টিরও বেশি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে আর অ্যান্ড এস, এফবিআর, বিবিএম, ইউএমবি, এসএফবি, এমএবি, এইচবিএমসহ ইত্যাদি নামের ভাটা উল্লেখযোগ্য। এসব ইটভাটার আশপাশে থাকা সুউচ্চ পাহাড় থেকে মাটি কেটে ভাটার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে বাগানের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটাগুলোর আশপাশে রয়েছে গ্রাম। এতে একদিকে ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে উর্বরা ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৯৯৫ এর ৬(খ) অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় কাটায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটতে পারবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় কাটার যজ্ঞ চললেও এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে বিপাকে পড়েছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলমপতি ইউনিয়নে ডাবুবুনিয়া ও মাঝের পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ভাটা মালিকরা ইট তৈরির মৌসুমে পাশের পাহাড় ও টিলা থেকে মাটি কেটে নিয়ে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। সবক'টিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠও। এই অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে এখানে পাহাড়-টিলার অস্তিত্ব মুছে যাবে। এখানে প্রশাসন কদাচিৎ ছোটখাটো অভিযান চালালেও ভাটা মালিকরা জরিমানা দিয়ে আবার একই অপরাধ করছে। এটা দেশের প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এর বিরুদ্ধে কথা বলে অনেকবার বিপদে পড়েছি।

এদিকে, গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট তিন পার্বত্য জেলার সব অবৈধ ইটভাটা সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আদালত অরেক আদেশে লাইসেন্স ছাড়া পরিচালনা করা সব ইটভাটার তালিকা আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে তৈরি করে আদালতে হলফনামা আকারে দাখিলের জন্য তিন জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকসহ সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, কাউখালী উপজেলাসহ পাশের রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাটে বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার জন্য অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় পাহাড় কাটার পরিমাণ বাড়ছেই। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের কারণে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। আবার এমন বিপর্যয় ঘটলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

কাউখালীর ইউএনও নাজমুন আরা সুলতানা জানান, পাহাড় কাটার বিষয়ে শুনেছি। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।