- সারাদেশ
- কোটি টাকার খাল খনন প্রকল্পে বড় অনিয়ম
কোটি টাকার খাল খনন প্রকল্পে বড় অনিয়ম

চাটখিলে রামচন্দ্রপুর খাল খননের নামে পাড় শেভ করার কাজ চলছে- সমকাল
নোয়াখালীর চাটখিল ও বরগুনার বেতাগীতে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাটখিলের পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রামচন্দ্রপুর খাল খননের কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে এলাকাবাসী ও ঠিকাদার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, নকশাবহির্ভূতভাবে খাল খননের নামে এক পাড়ের কৃষিজমি ও বসতভিটা ধ্বংস করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বেতাগীতে ১০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের খালের পলি শ্রমিকের মাধ্যমে কোদাল দিয়ে কাটার পরিবর্তে ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ঠিকাদার ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) লোকজন মিলে খাল খনন প্রকল্পের টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা করছেন।
পাউবোর নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় রামচন্দ্রপুর খালটির খনন কাজ শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের তলদেশ খনন না করে শুধু খালের দক্ষিণ পাশের পাড় পরিস্কার করে মাটি ফসলি জমির ওপর রাখা হচ্ছে। খনন না করে শুধু বাড়ানো হচ্ছে প্রশস্ততা। বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে মাটিধসে আবার খালেই পড়বে। ফলে এই এলাকার ফসল ও ঘরবাড়ি জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে। তারা আরও বলেন, অনিয়ম বন্ধ না হলে তারা কাজ করতে দেবেন না। যে কোনো মূল্যে এ কাজ ঠেকাবেন।
চাটখিল পৌরসভার ১১ নম্বর পুল থেকে উত্তর দিকে ফতেরপুর মহল্লার খালটি খননে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। কোথাও কোথাও খনন না করেই কাজ শেষ করা হয়েছে।
খননের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরিন ট্রেডার্সের ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাউবোর নকশা অনুযায়ী খাল খননের কাজ করা হচ্ছে। এখানে তাদের কোনো স্বার্থ নেই। খননের আগে তিনি মাইকিং করেছেন বলে দাবি করলেও এলাকাবাসী বলছেন কোনো মাইকিং করা হয়নি।
পাউবোর শাখা কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর ক্ষতি করে খাল খনন কার্যক্রম চালানো যাবে না। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলবেন।
পাউবোর নোয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়টি তিনি বিবেচনায় নেবেন। স্থানীয় লোকজন যদি খাল খনন না চান, তাহলে খনন করা হবে না।
বেতাগী সদর, হোসনাবাদ ও মোকামিয়া ইউনিয়নে পানি নিস্কাশন এবং সংরক্ষণের জন্য তিনটি উপপ্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি খাল খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। সংশ্নিষ্ট পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি কাজগুলো তদারকি করছে। কিন্তু দেখা গেছে, কিছু জায়গায় খালের দুই পাশে শুধু ঘাট কেটে পরিস্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও নালার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় খনন করলেও গভীরতাও খুব একটা দেখা যায়নি।
খাল খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধিত এবং এলজিইডির ক্রাইটেরিয়া পরিপূর্ণকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরেজমিন দেখা যায়, চুক্তিভঙ্গ করে শ্রমিকের মাধ্যমে কোদাল দিয়ে মাটি না কেটে ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে। এসব মাটির অধিকাংশ খালের গায়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দায়সারা গোছের খনন কোনো কাজে আসবে না।
প্রকল্পের লক্ষ্মীপুরা-রানীপুর- খন্তাকাটা অংশের ঠিকাদার মো. মোস্তাফিজুর রহমান (মুরাদ খলিফা) বলেন, কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। তবে সব অভিযোগ সত্য নয়।
ছোট ও বড় মোকামিয়া অংশের ঠিকাদার মো. শাহ জালাল বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এলজিইডির বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী রাইসুল ইসলাম বলেন, তিনি যতটুকু জানেন সরকারি নিয়ম মেনেই খনন কাজ হচ্ছে। কোথায় অনিয়ম হয়েছে তা দেখে পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
মন্তব্য করুন