- সারাদেশ
- সোহেল-রওশনের অনবদ্য প্রেমের গল্প
সোহেল-রওশনের অনবদ্য প্রেমের গল্প

গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামের দম্পতি সোহেল ও রওশন আরা। ছবি-সমকাল
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, পরিবারের ঘোর আপত্তি কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি সোহেল ও রওশনের প্রেমে। প্রিয়জনের কটুক্তি, সমাজের বিধিনিষেধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে ১৪ বছর আগে ঘর বেঁধেছিলেন তারা। তাদের অনবদ্য ভালোবাসার গল্পই এখন নিন্দুকদের কাছে প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সোহেল-রওশন আরার প্রেমের গল্প শুরু ২০০৭ সালে। দশ টাকার নোটে লেখা নাম্বারে মোবাইল ফোনে পরিচয়। প্রতিদিনের কথোপকথনে ঘটে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামের রওশন আরা প্রাথমিক পর্যায়েই সোহেলকে জানান, তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু ভালোবাসা আর মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়া সোহেল কোনোভাবেই হাত ছাড়তে রাজি নন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করার পর রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সোহেল মিয়া ২০০৭ সালে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন রওশনকে। রওশন জন্ম থেকে বিকলাঙ্গ।
সোহেল সেই থেকে পিঠে চড়িয়ে সংসারের কাজ, এখানে সেখানে যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর স্ত্রীর সকল দায়িত্ব পালন করে চলেছেন ১৪ বছর ধরে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোহেল মিয়া আট ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নেন সোহেল। প্রেমের এক বছরের মধ্যেই রওশনকে বিয়ে করেন তিনি।
সোহেল বলেন, পরিবারের সদস্যদের আপত্তির কারনে স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে উঠতে পারেননি তিনি।
অকৃত্রিম ভালোবাসার রওশনকে সবসময় পাশে পেতে আর দেখাশোনার জন্য ঢাকায় বহুমূল্য বেতনের চাকরি ছেড়ে গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে ব্যবসা শুরু করেন সোহেল।
আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা মিলে ওই দম্পত্তির। ছোট্র একটি মাটির ঘর আর একটি টং দোকানই তাদের একমাত্র সম্বল। শত কষ্টের মাঝেও ভালোবাসা আর পরস্পরের আস্থা-বিশ্বাসই যেন তাদের সুখের রাজ্য।
স্থানীয়রা জানান, জন্ম থেকেই দু-পা অচল রওশন স্বামীর পিঠে চড়ে চলাচল করেন। হয়েছেন এক কন্যা সন্তানের মা। কঠিন এ জীবন সংগ্রামে মসৃণ পথচলার মূলে ছিল প্রেম, ভালোবাসা, ভরসা আর বিশ্বাস।
সোহেল বলেন, ‘আমাদের ভালোবাসাটাই ছিল অন্যরকম। অচল-অক্ষম একটা মেয়েকে অন্ধের মত ভালোবেসেছি, সেও ছিল আমার প্রেমে অন্ধ। ছিল পবিত্র প্রেম, তাই শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম থাকলেও স্বাভাবিকভাবে একটি মেয়ে তার স্বামীর জন্য যতটুকু করে, রওশন তার চেয়েও বেশি কিছু করার চেষ্টা করে আমার জন্য। আমি তার ভালোবাসা আর গুণে মুগ্ধ।’
রওশন বলেন, ‘প্রতিবন্ধী বলে আমার ও তার পরিবারের সম্মতি ছিল না বিয়েতে। আমরা পালিয়ে বিয়ে করি। প্রথমদিকে সবাই বলাবলি করত সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সোহেল আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। আমাদের সুখের সংসারে এক মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহন করেছে।’
সোহেল-রওশনের ভালোবাসার অনন্য নিদর্শণ ও বন্ধন দেখে রীতিমতো অবাক স্বজন ও প্রতিবেশীরাও।
তারা বলেন, আমরা প্রথম অবস্থায় সোহেলকে বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ে করে হয়তো কিছুদিন পর তাকে ছেড়ে চলে যাবে সোহেল। কিন্তু তাদের প্রেমে যে এতটা গভীরতা তা আমরা বুঝতে পারিনি। সত্যিকারের প্রেম যে কারে কয়, তা তাদের দেখলেই বুঝা যায়। ভালোবাসা মানে একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা। সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থাকার দৃষ্টান্ত তাদের ১৪ বছরের দাম্পত্য।
মন্তব্য করুন