- সারাদেশ
- জলাবদ্ধতা আগের মতোই জ্বলে না সড়কবাতি
চসিক মেয়র রেজাউলের ১ বছর
জলাবদ্ধতা আগের মতোই জ্বলে না সড়কবাতি
নগর পিতার দাবি ৮০ ভাগ সফল তিনি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে এক বছর পার করলেন রেজাউল করিম চৌধুরী। এই সময় নগরবাসীর প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে তার এখন 'ময়নাতদন্ত' শুরু হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নগরের সড়কের আলোকায়ন, সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশকনিধন হচ্ছে সিটি করপোরেশনের সেবামূলক প্রধান কাজ। কিন্তু এ সময় এসব বিষয়ে তিনি কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারেননি। নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণেও সফল হননি তিনি। তবে এক বছরে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে ৮০ ভাগ সফল হয়েছেন বলে দাবি তার।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারির শপথ গ্রহণ করেন রেজাউল করিম। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের আগে ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একনিষ্ঠ অনুসারী হচ্ছেন রেজাউল করিম। মেয়র নির্বাচিত হয়েই সিটি করপোরেশন পরিচালনায় 'গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরীর' পদাঙ্ক অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কর না বাড়িয়েই নগরবাসীকে সেবা দেবেন। সবসময় নগরবাসীর জন্য খোলা থাকবে তার দরজা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেন তিনি। তবে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক গুজব আখ্যায়িত করে তিনি বলছেন, 'গৃহকর বাড়ানো হবে না। করের আওতা বাড়ানো হবে।'
জলাবদ্ধতা : চট্টগ্রামের বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা নিরসনে নগরে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চসিকের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি। নির্বাচনের আগে নগরের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় সংকট জলাবদ্ধতা উল্লেখ করে তা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়নেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেজাউল করিম।
এ ছাড়া নগরীর দখল হওয়া খাল নালা নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিস্কাশনের উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত এক বছরে এই দুই প্রতিশ্রুতির কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
দুটি সমন্বয় সভা করেই দায় সেরেছেন তিনি। গত বছরের ১৪ জুনের সমন্বয় সভায় ওই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে খালগুলো পরিস্কারসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত হলেও তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং খালের বাঁধের কারণে উল্টো গত বর্ষায় কয়েক বছরের তুলনায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে। সাড়ে সাত বছর ধরে ঝুলে থাকা ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিধন : ২০১৬ সালে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচি চালু করেছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় ২ হাজার ৬৫ জন কর্মী। বলা হয়েছিল, এ কার্যক্রমের ফলে নগরের যেখানে-সেখানে আবর্জনা পড়ে থাকবে না। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ২০২১ সালে নির্বাচনের আগে ডোর টু ডোর কার্যক্রম জোরালো করতে নজরদারি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেজাউল করিম। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। উল্টো এ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহারে বর্জ্য অপসারণে নজরদারি বাড়ানো, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট তৈরি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন রেজাউল করিম। তার এই প্রতিশ্রুতি ইশতেহারেই থেকে গেছে। বাস্তবে নগরের দুটি ডাম্পিং ইয়ার্ড আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরে আবর্জনা উপচে পড়ছে। দুটি ইয়ার্ডেই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি আবর্জনা ফেলা হয়েছে। তবে জাপানি সংস্থা জাইকার সহায়তায় চিকিৎসা বর্জ্য পোড়াতে একটি ইনসিনারেটর স্থাপন করা হয়েছে গত জানুয়ারিতে।
এদিকে ওষুধ ছিটানোর পরও মশা নিধন না হওয়ায় ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বছর পার করেছেন তিনি। আগের মেয়রের আমলে ওষুধ অকার্যকর বলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে। আইনি জটিলতার অজুহাতে গবেষকদের সুপারিশ অনুযায়ী কার্যকর ওষুধও কেনেনি সিটি করপোরেশন। বছর শেষে মশা নিধনে প্রচলিত ওষুধই কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রসঙ্গে নগরের মোমেনবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক ফরহাদ উদ্দিন বলেন, 'এ বছরের মতো মশার উৎপাত আর কখনও হয়েছে বলে মনে হয় না। মশার কামড়ের যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পর বাসায় টেকা দায়।'
সড়ক বেহাল : নগরে পাকা সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৪১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলো কিছুটা ভালো থাকলেও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের কারণে নগরের লাইফ লাইন বলা হয় পোর্ট কানেকটিং সড়ককে। চার বছর ধরে বেহাল দশা সড়কটির। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারেননি মেয়র রেজাউল।
এ ছাড়া নগরের মেরিনার্স সড়কে ছোট-বড় গর্ত। অক্সিজেন-মুরাদপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ। অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বড় বড় গর্ত। গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। হালিশহরের চৌচালা সড়কেরও নাজুক দশা। এদিকে চট্টগ্রাম নগরে ফুটপাত রয়েছে ২৮১ কিলোমিটার। স্বয়ং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফুটপাতে ২৫৮টি দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। অথচ নির্বাচনের আগে ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল মেয়র রেজাউলের।
জ্বলে না সড়কবাতি : সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের দাবি, নগরের ৮০ ভাগ এলাকা আলোকায়ন করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র। নগরের প্রধান সড়কগুলোতে বাতি জ্বললেও অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সড়কে প্রায় সময় বাতি জ্বলে না। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাউন্সিলররা।
পরিকল্পিত ফোরাম চট্টগ্রামে সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, এমনিতে ফুটপাতগুলোতে মানুষের হাঁটাচলার সুযোগ কমছে। এর মধ্যে ফুটপাতে দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়ে নাগরিকদের অধিকার খর্ব করেছে সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে মেয়র তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেছেন।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বলেন, নগরবাসী বেশিকিছু চান না। বাসস্থান, শিক্ষা, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদে চলাফেরার নিশ্চয়তা। এসব সুবিধা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে সিটি করপোরেশন। সড়কে ঠিকমতো বাতি জ্বলে না। ফুটপাতে হাঁটার সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলো যে সমন্বয় থাকার কথা, সেটিও নেই। ফলে উন্নয়ন কাজ নিয়ে নগরবাসীকে বছরের পর বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেয়রের ভাষ্য : রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অগোছালো অবস্থায় সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কাজের শৃঙ্খলা আনতে সময় লাগবে। বেহাল থাকা সড়কগুলো ঠিক করা হচ্ছে। বর্জ্য অপসারণের কাজেও গতি আনা হচ্ছে। মশকনিধনে কার্যকর ওষুধ কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরের সড়কে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।'
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারির শপথ গ্রহণ করেন রেজাউল করিম। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের আগে ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একনিষ্ঠ অনুসারী হচ্ছেন রেজাউল করিম। মেয়র নির্বাচিত হয়েই সিটি করপোরেশন পরিচালনায় 'গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরীর' পদাঙ্ক অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কর না বাড়িয়েই নগরবাসীকে সেবা দেবেন। সবসময় নগরবাসীর জন্য খোলা থাকবে তার দরজা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেন তিনি। তবে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক গুজব আখ্যায়িত করে তিনি বলছেন, 'গৃহকর বাড়ানো হবে না। করের আওতা বাড়ানো হবে।'
জলাবদ্ধতা : চট্টগ্রামের বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা নিরসনে নগরে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চসিকের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি। নির্বাচনের আগে নগরের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় সংকট জলাবদ্ধতা উল্লেখ করে তা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়নেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেজাউল করিম।
এ ছাড়া নগরীর দখল হওয়া খাল নালা নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিস্কাশনের উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত এক বছরে এই দুই প্রতিশ্রুতির কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
দুটি সমন্বয় সভা করেই দায় সেরেছেন তিনি। গত বছরের ১৪ জুনের সমন্বয় সভায় ওই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে খালগুলো পরিস্কারসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত হলেও তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং খালের বাঁধের কারণে উল্টো গত বর্ষায় কয়েক বছরের তুলনায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে। সাড়ে সাত বছর ধরে ঝুলে থাকা ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিধন : ২০১৬ সালে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচি চালু করেছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় ২ হাজার ৬৫ জন কর্মী। বলা হয়েছিল, এ কার্যক্রমের ফলে নগরের যেখানে-সেখানে আবর্জনা পড়ে থাকবে না। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ২০২১ সালে নির্বাচনের আগে ডোর টু ডোর কার্যক্রম জোরালো করতে নজরদারি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেজাউল করিম। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। উল্টো এ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহারে বর্জ্য অপসারণে নজরদারি বাড়ানো, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট তৈরি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন রেজাউল করিম। তার এই প্রতিশ্রুতি ইশতেহারেই থেকে গেছে। বাস্তবে নগরের দুটি ডাম্পিং ইয়ার্ড আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরে আবর্জনা উপচে পড়ছে। দুটি ইয়ার্ডেই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি আবর্জনা ফেলা হয়েছে। তবে জাপানি সংস্থা জাইকার সহায়তায় চিকিৎসা বর্জ্য পোড়াতে একটি ইনসিনারেটর স্থাপন করা হয়েছে গত জানুয়ারিতে।
এদিকে ওষুধ ছিটানোর পরও মশা নিধন না হওয়ায় ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বছর পার করেছেন তিনি। আগের মেয়রের আমলে ওষুধ অকার্যকর বলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে। আইনি জটিলতার অজুহাতে গবেষকদের সুপারিশ অনুযায়ী কার্যকর ওষুধও কেনেনি সিটি করপোরেশন। বছর শেষে মশা নিধনে প্রচলিত ওষুধই কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রসঙ্গে নগরের মোমেনবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক ফরহাদ উদ্দিন বলেন, 'এ বছরের মতো মশার উৎপাত আর কখনও হয়েছে বলে মনে হয় না। মশার কামড়ের যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পর বাসায় টেকা দায়।'
সড়ক বেহাল : নগরে পাকা সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৪১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলো কিছুটা ভালো থাকলেও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের কারণে নগরের লাইফ লাইন বলা হয় পোর্ট কানেকটিং সড়ককে। চার বছর ধরে বেহাল দশা সড়কটির। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারেননি মেয়র রেজাউল।
এ ছাড়া নগরের মেরিনার্স সড়কে ছোট-বড় গর্ত। অক্সিজেন-মুরাদপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ। অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বড় বড় গর্ত। গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। হালিশহরের চৌচালা সড়কেরও নাজুক দশা। এদিকে চট্টগ্রাম নগরে ফুটপাত রয়েছে ২৮১ কিলোমিটার। স্বয়ং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফুটপাতে ২৫৮টি দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। অথচ নির্বাচনের আগে ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল মেয়র রেজাউলের।
জ্বলে না সড়কবাতি : সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের দাবি, নগরের ৮০ ভাগ এলাকা আলোকায়ন করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র। নগরের প্রধান সড়কগুলোতে বাতি জ্বললেও অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সড়কে প্রায় সময় বাতি জ্বলে না। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাউন্সিলররা।
পরিকল্পিত ফোরাম চট্টগ্রামে সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, এমনিতে ফুটপাতগুলোতে মানুষের হাঁটাচলার সুযোগ কমছে। এর মধ্যে ফুটপাতে দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়ে নাগরিকদের অধিকার খর্ব করেছে সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে মেয়র তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেছেন।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বলেন, নগরবাসী বেশিকিছু চান না। বাসস্থান, শিক্ষা, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদে চলাফেরার নিশ্চয়তা। এসব সুবিধা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে সিটি করপোরেশন। সড়কে ঠিকমতো বাতি জ্বলে না। ফুটপাতে হাঁটার সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলো যে সমন্বয় থাকার কথা, সেটিও নেই। ফলে উন্নয়ন কাজ নিয়ে নগরবাসীকে বছরের পর বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেয়রের ভাষ্য : রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অগোছালো অবস্থায় সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কাজের শৃঙ্খলা আনতে সময় লাগবে। বেহাল থাকা সড়কগুলো ঠিক করা হচ্ছে। বর্জ্য অপসারণের কাজেও গতি আনা হচ্ছে। মশকনিধনে কার্যকর ওষুধ কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরের সড়কে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।'
মন্তব্য করুন