সাত মাসেই ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বাড়িগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘর জুড়ে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে প্রকল্পের এসব বাড়ি। বাড়ি ধসে পড়ার আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা। যারা রয়ে গেছেন, তাদেরও রাত কাটছে দুশ্চিন্তায়। মুক্তাগাছার কোকাডাঙ্গা গ্রামের আবাসন প্রকল্পে এ দৃশ্য দেখা দিছে।

স্থানীয়রা জানায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আবাসন প্রকল্পের আওতায় মুক্তাগাছায় ১ম ও ২য় ধাপে ৯৫টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।  ভূমি ও বাড়ি নেই এমন মানুষের মধ্যে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই আওতায় দাওগাঁও ইউনিয়নের কোকাডাঙ্গা গ্রামে ১ম ধাপে ও ২য় ধাপের আওতায় ১২টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১ম পর্যায়ের ছয়টি বাড়ির বরাদ্দ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে গত বছরের ২০ জুন। তবে বাড়ি পাওয়ার পর পরই বিল্লাল হোসেন , মুর্শিদা আক্তার ও মর্জিনা বেগমের বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়।

স্থানীয়রা আরও জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পর, উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ওই সময় তড়িঘড়ি করে বাড়িগুলোর ফাটল স্থানে সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করে দেয়। তবে সেই মেরামত বেশিদিন টিকে নাই। দিন যত যাচ্ছে ততই ওই ফাটলগুলো আরও লম্বা ও বড় আকার ধারণ করেছে। এ তিনটি বাড়ির পুরো অংশেই বড় বড় ফাটল ধরেছে। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বাড়িগুলো। এ আতংকে এ প্রকল্পের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন ও মুর্শিদা আক্তার ইতোমধ্যে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তবে মর্জিনা আক্তার এখনো ওই ফাটল ধরা ঘরে রয়ে গেছেন।

ফাটল ঘরেই দেখা হয় প্রকল্পের বাসিন্দা মর্জিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি এ সময় সমকালকে জানান, তাদের কাছে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার পর পরই ঘরে ফাটল দেখা দেয়। তখন অভিযোগ করা হলে, দ্রুত কিছু সিমেন্ট দিয়ে ওইসব ফাটল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন আরও বড় আকার ধারণ করে ফাটল দেখা দিয়েছে তার ঘরে। পুরো ঘর জুড়েই দেখা দিয়েছে ফাটল। যে কোনো সময় ধসে পড়তে তার বাড়িটি। ধসে পড়ার আতঙ্কের মধ্যেই তিনি সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন এ বাড়িতে।

তিনি আরও জানান, তার আর কোনো ঘরবাড়ি না থাকায় ধসে পড়ার আতঙ্কের মধ্যেই এখনো ওই বাড়িতে রয়ে গেছেন। এই ফাটল বাড়িই  তার শেষ সম্বল।

আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে আসা বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্লাল কানার বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন এ প্রতিবেদককে জানান, সরকার অন্ধ লোকটাকে একটি বাড়ি দিয়েছে, তাও আবার ফাটল বাড়ি। যে কোনো সময় তার বাড়িটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। এ কারণেই তিনি ওই প্রকল্পের বাড়ি ছেড়ে আবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।   

বর্তমানে ছয় বাড়ির বাসিন্দার মধ্যে শুধুমাত্র মর্জিনা আক্তার ও আব্দুল মান্নান বসবাস করেন আবাসনের বাড়িতে। অন্য সদস্যদের মধ্যে দুই বাসিন্দা সরে গেছেন ফাটল আতঙ্কে, আর অন্য সদস্যরা তাদের পাওয়া বরাদ্দের ঘরবাড়ি ঠিকঠাক থাকার পরও এখানে বসবাস করেন না। অভিযোগ রয়েছে, তাদের প্রত্যকেরই বাড়ি ও জমি রয়েছে। এ কারণে তারা সেখানে থাকতে চান না। মাঝেমধ্যে তারা শুধু বাড়িগুলো দেখতে আসেন ।

আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, সড়কের দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি বাড়ি নির্মাণ করে তাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সড়কের পাশের তিনটি বাড়িই থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাড়িগুলোতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া একমাত্র পানির নলকূপটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, যে কারণে এ সব বাড়িতে কেউ আর থাকতে চান না। বিপদে পড়ে তিনি বসবাস করছেন। সরকার থেকে তাদের কোনো খোঁজ খবর নেওয়া হয় না এমনও অভিযোগ তার।

এলাকার বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, যাদের নামে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশের নিজেদের জমি ও ঘর রয়েছে। এ কারণেই তারা এ সব বাড়িতে বসবাস করেন না।

তিনি আরও বলেন, তার বাড়ি সংলগ্ন ২য় পর্যায়ের ৬টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু এখনো কাউকে এ সব বাড়িতে পাওয়া যায় না।

দাওগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, তিনটি ঘরে ফাটল ধরেছে, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, বাড়িগুলো মেরামত করে দেবেন। আশা করছি তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুক্তাগাছার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মনসুর জানান, বিষয়টি জানার পর পরই ফাটল ঘরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে । প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগেই নতুন করে ঘরগুলোর মেরামত করে দেওয়া হবে।