- সারাদেশ
- গণটিকা নিতে জনভোগান্তি
গণটিকা নিতে জনভোগান্তি

করোনার গণটিকাদান কর্মসূচিতে শনিবার প্রতিটি কেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ভোগান্তি ও হয়রানিতে পড়তে হয়েছে অনেককে। রাজধানীর মিরপুর পল্লবীর কমিউনিটি সেন্টার থেকে তোলা ছবি - সমকাল
রাজধানীর পশ্চিম কাফরুলের হালিম ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে সকাল থেকেই ভিড়। কলেজের ছোট্ট আঙিনায় শত শত মানুষের গাদাগাদি। সবাই গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় টিকা নিতে এসেছেন। এ জন্য নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অবস্থা বেগতিক দেখে কেউ কেউ টিকা না নিয়ে ফিরেও যাচ্ছেন।
এ চিত্র কেবল ওই টিকাকেন্দ্রের নয়, গতকাল শনিবার গণটিকাদান কার্যক্রমের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ছিল মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। টিকা নিতে দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। ছিল না স্বাস্থ্যবিধির উপস্থিতি।
২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের এক কোটি মানুষকে গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রথম ডোজ টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। বলা হয়েছিল, এই গণটিকাদান কার্যক্রমের পর প্রথম ডোজের টিকা বন্ধ থাকবে। কিন্তু কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হওয়ায় এ কর্মসূচি আরও দু'দিন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের কার্যক্রমও চলবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
গতকাল মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় শনিবার এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হলে ১২ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে। দেশের ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি গণটিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। ইউনুস হোসেন নামে একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, গণটিকার কথা শুনে সকালেই পশ্চিম কাফরুলের হালিম ফাউন্ডেশন স্কুলে যান টিকা নিতে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করেও টিকাদানকারীর কাছে পৌঁছাতে পারেননি। পরে সেখান থেকে যান শেরেবাংলা নগরের প্রবীণ হাসপাতাল কেন্দ্রে। সেখানে লাইনের দৈর্ঘ্য কিছুটা কম থাকলেও টিকা পেতে আরও প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়।
হালিম ফাউন্ডেশন স্কুল কেন্দ্রের টিকাদান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনকারী স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক রাসেল দুপুর ২টার দিকে জানান, তাদের সারা দিনে এক হাজার মানুষের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ওই টিকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আরও ৫০০ ডোজ পাঠানোর জন্য খবর দেওয়া হয়েছে। এখানে লাইন দীর্ঘ হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, টিকাদানের জন্য অন্তত ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন ছিল। আছে দু'জন। এ জন্য সময় লাগছে।
কেন্দ্রটির স্বাস্থ্যকর্মী আফরোজা জানান, একজন পুরুষদের, আরেকজন নারীদের টিকা দিচ্ছেন। তারা চেষ্টা করছেন দ্রুতই টিকা দেওয়া শেষ করতে। টিকাগ্রহীতা ও টিকাদানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্মনিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্রধারীদের সেগুলো দেখে টিকা দেওয়া হচ্ছে। যাদের কিছুই নেই, তাদের মোবাইল নম্বর ও নাম-ঠিকানা লিখে টিকা দিতে হচ্ছে। যাদের মোবাইল নম্বর নেই তাদের আত্মীয়দের মোবাইল নম্বর রাখা হচ্ছে। কারণ দ্বিতীয় ডোজের মেসেজ ওই মোবাইলে যাবে। সেটা টিকাগ্রহীতাকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দুপুরে শেরেবাংলা নগরের প্রবীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও দীর্ঘ সারি। হাসপাতালের সুপারভাইজার প্রিন্স জানান, কেন্দ্রটি থেকে ৭০০ জনের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে আর ৫০টির মতো টিকা অবশিষ্ট ছিল। আরও ৫০০ টিকা সরবরাহ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রটির লাইনে জন্মনিবন্ধনের কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নবম শ্রেণির ছাত্র রিফাত আহমেদ বলেন, অনেক সময় হলো লাইনে আছি। আমার সামনে আরও ৩০ জন রয়েছেন।
গফুর নামে একজনকে সকালে দেখা যায় তালতলা টিকাকেন্দ্রের লাইন ছেড়ে চলে যেতে। চলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানান, একটি বেসরকারি অফিসে পিয়ন পদে চাকরি করেন। টিকার জন্য এক ঘণ্টা পর অফিসে যাবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকা না পেয়ে তিনি অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন।
রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকাপ্রত্যাশীর ভিড় সামলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আখতার বলেন, সকাল ৭টার আগে থেকেই মানুষ টিকার জন্য আসতে শুরু করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টার ভেতরেই তিন হাজার মানুষ এসেছেন। ভিড় সামলাতে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রথম ডোজ ১২ কোটি: গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু করে সরকার। দুই মাস পর ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম। আর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত সারাদেশে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৮১ হাজার ৩৩১ জন। আর ৮ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭৮ জন নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজের টিকা। একই সঙ্গে বুস্টার ডোজের টিকা পেয়েছেন ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৬ জন। গতকালের লক্ষ্যমাত্রার এক কোটি ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হলে প্রায় ১২ কোটি মানুষ প্রথম ডোজের টিকার আওতায় চলে আসবে।
মন্তব্য করুন