- সারাদেশ
- নাপা নয়, মায়ের বিষ মাখানো মিষ্টি খেয়ে ২ শিশুর মৃত্যু: পুলিশ
নাপা নয়, মায়ের বিষ মাখানো মিষ্টি খেয়ে ২ শিশুর মৃত্যু: পুলিশ

রীমা বেগম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন ও রীমা বেগমের দুই শিশু ইয়াছিন মিয়া (৭) ও মোরসালিন মিয়া (০৪) নাপা সিরাপ নয়, মায়ের দেওয়া বিষ মাখানো মিষ্টি খেয়ে মারা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমের জন্য মা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
দুই শিশু নিহতের ঘটনায় তাদের পিতা ইসমাইল হোসেন শিশু দুটির মা রীমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোরে মা রীমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। তবে প্রেমিক সফিউল্লাহ পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্যা মোহাম্মদ শাহীন গ্রেপ্তার রীমা আক্তারের বরাত দিয়ে জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন শিশুদের মা। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনকে হত্যা করেন মা। পরে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নাপা সিরাপের রি-অ্যাকশন হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১০ মার্চ বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন সুজন ও চাতাল শ্রমিক রীমা বেগমের দুই শিশু সন্তানের জ্বর হওয়ায় দুর্গাপুর বাজারের জনৈক মাইন উদ্দিনের ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ কিনে খাওয়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে বমি করতে শুরু করে তারা। এরপর আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টার ব্যবধানের দুই শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।
নিহত দুই শিশুর মা ও স্বজনদের অভিযোগ, তারা গরিব ও দরিদ্র। তাই সিরাপ খেয়ে অসুস্থ হওয়া দুই শিশু নিয়ে হাসপাতালে গেলে যথাযথ চিকিৎসা করা হয়নি। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে এবং হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সঠিক চিকিৎসা পেলে শিশু দুটি মারা যেত না বলে দাবি করেন তারা।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সার্বিক ও সুষ্ট তদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন ও ফেনীর সিভিল সার্জন রফিক-উস সালেহীন।
তদন্ত কমিটি সরেজমিনে নিহত দুই শিশুর বাড়িতে এসে তাদের পিতা-মাতাসহ নিকটাত্মীয়দের মতামত নেন এবং আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই ও সংশ্লিষ্টদের মতামত সংগ্রহ করেন। মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় দাখিল করেন।
এদিকে গতকাল নাপা সিরাপ খাওয়ার পর বমি হওয়া এবং পরে জেলা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ইয়াছিন মিয়া (০৭) ও মোরসালিন মিয়া (০৪) নামে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হাছান শাহরিয়ার কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক।
মন্তব্য করুন