- সারাদেশ
- রিমা এমনটি করবেন বিশ্বাস করছে না দুর্গাপুর, পরিবার হতভম্ব
আশুগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যু
রিমা এমনটি করবেন বিশ্বাস করছে না দুর্গাপুর, পরিবার হতভম্ব
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামে ইয়াসিন মিয়া (৭) ও মোরসালিন মিয়ার (৪) মৃত্যুর ঘটনায় মা রিমা বেগমের বিরুদ্ধে ‘পরকীয়া সম্পর্কের’ যে অভিযোগ উঠেছে তা বিশ্বাস করতে চাইছেন না দুর্গাপুরবাসী।
এই ঘটনায় নিহত দুই শিশুর পরিবারও হতবাক। তারা বলছেন, রিমার ‘পরকীয়া সম্পর্ক চলছে’ এমন ঘটনা তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
রিমার স্বামী ইসমাইল হোসেন সুজন, শাশুড়ি নিলুফা বেগম, জা ফাতেমা বেগম, চাচা শ্বশুড় ফজলুল হক সবাই একযোগে বলেন, রিমা এমন জঘন্য কাজ করতে পারে তা ভাবতেও পারেননি কোনো দিন। সন্দেহ করার মতো কিছু আগে বুঝতেও পারেননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সমকাল প্রতিবেদকরা তাদের বাড়িতে গেলে তারা এ মন্তব্য করেন। ইয়াসিন ও মোরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় তারা রিমার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকজন গ্রামবাসী সমকালকে বলেন, রিমার আচরণে কখনও সন্দেহজনক মনে হয়নি তাদের। চাতাল সর্দার সফুর সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে, এ কথা মানতে চাইছেন না তাদের অনেকে।
নিহত শিশুদের বাবা ইসমাইল হোসেন সুজন সিলেটের গোলাপগঞ্জের ইট ভাটা শ্রমিকের কাজ করতে। সংসারের সচ্ছলতার আশায় গত ৫-৭ বছর ধরে রিমা আশুগঞ্জের খড়িয়ালায় একটি রাইস মিলে (চাতালকল) শ্রমিকের কাজ নিয়েছিলেন।
সংসারে কিভাবে স্বচ্ছলতা আনা যায়, সন্তানদের কিভাবে বড় করবেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে এসব আলাপই তিনি বেশি করতেন বলে জানা গেছে।
রিমার বড় ভাই ঘাট শ্রমিক মোস্তাক মিয়া সমকালকে বলেন, ‘আমি কী বলব, বুঝতে পারতাসি না। রিমা এমনটা করব, এটা ভাবতেও পারি না। সে কোনোদিন তার শ্বশুর বাড়ি, স্বামীরে নিয়ে তো বিচারটিচার দেয় নাই। তাহলে এমনটা সে কেন করব? তবে, এসব কিচু সত্যি হলে তার শাস্তি হোক, সেটা চাই।’
অভিযুক্ত চাতাল সর্দার সফিউল্লাহ সফুর স্ত্রী সানজিদা বেগম সমকালকে বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। তিনি এমন কোনো কাজ করবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। রিমা তার দুই ছেলেকে হত্যা করবেন, এটাও আমি বিশ্বাস করি না। ’
এদিকে ইয়াসিন মিয়া (৭) ও মোরসালিন মিয়ার (৪) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তাদের মা রিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পরিদর্শক দিদারুল ইসলাম সমকালকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে রিমা বেগমকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেখানে তিনি বিচারক আফ্রিনা আহমেদ হ্যাপির সামনে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে শিশুদের বাবা ইসমাইল হোসেন সুজন রিমা এবং সফিউল্লাকে সফুকে দায়ী করে আশুগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার আরেক আসামি রিমার কথিত প্রেমিক সফিউল্লা (সফু) এখন পলাতক রয়েছেন। আশুগঞ্জ উপজেলার মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা সফু ৪ সন্তানের জনক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্যা মোহাম্মদ শাহীন গ্রেপ্তার রিমা আক্তারের বরাত দিয়ে জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন শিশুদের মা। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনকে হত্যা করেন মা। পরে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নাপা সিরাপের রি-অ্যাকশন হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটি কমিটি করে।
সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে নাপা সিরাপের একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আশুগঞ্জের ওই পরিবারের কাছ থেকে নাপা সিরাপের বোতল নিয়ে সিআইডিতে পাঠায় স্থানীয় পুলিশ।
সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আশুগঞ্জের যে দোকান থেকে কেনা ওষুধ সেবনের পর শিশু দুটি মারা গেছে, সেই দোকান থেকে আটটি বোতল জব্দ করেছেন তারা। এছাড়া ডিপো থেকে আরও দুটি ব্যাচের নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এই প্যারাসিটামল সিরাপের তিন ব্যাচের নমুনা পরীক্ষা করে ‘ক্ষতিকর কিছু মেলেনি’।
এদিকে এর মধ্যে খবর আসে, শিশু দুটিকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা সেই রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগের টিকেট কাটলেও জরুরি বিভাগের নিবন্ধন খাতায় তাদের নাম পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের তরফ থেকে সে সময় বলা হয়, টিকেট কাটলেও স্টমাক ওয়াশের ভয়ে হয়ত পরিবারের সদস্যরা শিশু দুটিকে জরুরি বিভাগে না দেখিয়েই ফিরে যান।
মন্তব্য করুন