- সারাদেশ
- তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা, মৃতদেহের পাশে ভাতিজার জন্মনিবন্ধন রেখে যান চাচা
তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা, মৃতদেহের পাশে ভাতিজার জন্মনিবন্ধন রেখে যান চাচা

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ধোবাউড়া-তারাকান্দা সড়কের গোয়াতলা ইউনিয়নের টাংগাটি এলাকায় তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
হত্যা মামলার মূল আসামি মো. আবদুর রাজ্জাক মন্ডলকে (৬০) গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুবা আক্তারের আদালতে জবানবন্দি দেয় রাজ্জাক। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।
জানা যায়, টেলিভিশনে সাংবাদিক হবার ইচ্ছা পূরণের আশ্বাসে তরুণীর সঙ্গে প্রথমে বিয়ের নাটক করেন তিনি। পরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তুলে দেয় দুই যুবকের হাতে। তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করেন তারা। এরপর ভাইয়ের পরিবারকে ফাঁসাতে ভাতিজার একটি জন্মনিবন্ধন নিহত তরুণী পকেটে রেখে যায়।
টাংগাটি এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার তরুণীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তরুণীর পরিচয় শনাক্ত না গেলে ঘটনাটি তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তরুণীর প্যান্টের পকেটে থাকা জন্মনিবন্ধনের সূত্র ধরে আগাতে শুরু করে পুলিশ। দুটি জন্মনিবন্ধনের মধ্যে একটি তরুণীর নিজের এবং অন্যটি টাংগাটি গ্রামের আমিনুল ইসলামে ছেলে শহিদুল্লাহর। জন্মনিবন্ধন যাচাই করে সনাক্ত হয় নিহতের পরিচয়।
নিহত তরুণীর নাম রিবা আক্তার (১৫)। তিনি নরসিংদীর মধাবদী উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন রিবাঅ। পরিবারের অভাব মেটাতে গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে শ্রমিকের চাকরি নেন তিনি।
মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া জন্মনিবন্ধনের সূত্র ধরে পুলিশ টাংগাটি গ্রামের আমিনুল ইসলাম ও তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তরুণীর সঙ্গে তাদের পরিচয় না থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হওয়ার শুরু করে অনুসন্ধান।
পুলিশ অনুসন্ধানে জানতে পারে তরুণী গাজীপুরের যে এলাকায় বসবাস করতেন সেখানে এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার ‘ভালো সম্পর্ক’ ছিল। মো. আবদুর রাজ্জাক মন্ডল সেখানে আয়ুর্বেদিক ফার্মেসি চালাতেন। গাজীপুরে বসবাস করলেও রাজ্জাকের পৈত্রিক বাড়ি টাংগাটি মধ্যপাড় এলাকায়। ওই গ্রামের প্রয়াত তৈয়ব আলীর ছেলে তিনি। যে স্থানে মেয়েটির মৃতদেহ পাওয়া গেছে তার কাছেই রাজ্জাকের বাড়ি।
বৃদ্ধ রাজ্জাকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রিবা আক্তারকে টেলিভিশনে সংবাদকর্মী হিসেবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় রাজ্জাক। সেই আশ্বাসে গত দুই মাস আগে মেয়েটির সঙ্গে বিয়ের নাটক করে রাজ্জাক। এরপর মেয়েটির সঙ্গে চলতে থাকে শারীরিক নির্যাতন। কথা অনুযায়ী টেলিভিশনে চাকরির ব্যবস্থা ও স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতির জন্য গত কিছুদিন ধরে চাপ শুরু করে তরুণী। এতে ঘাবড়ে যেতে থাকে রাজ্জাক। শুরু হয় তরুণীকে হত্যার পরিকল্পনা।
রাজ্জাকের সঙ্গে তার সহোদর ভাই আমিনুল ইসলামের পৈত্রিক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। সেই বিরোধে আমিনুলকে ফাঁসাতে হয় পরিকল্পনা। পরিকল্পনা সফল করতে বেছে নেওয়া হয় আমিনুলের বিরোধী আরও দুই ব্যক্তিকে। আমিনুলকে শায়েস্তার পথ পেয়ে রাজ্জাকের প্রস্তাবে তারাও রাজি হয়ে যান। পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেনি।
গত সোমবার রাজ্জাক তার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য তরুণীকে নিয়ে যায়। সেদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে ধোবাউড়ায়র গোয়াতলা কংশ নদীর তীরে গিয়ে তরুণীকে তুলে দেয় আগে থেকে অপেক্ষমান দুই ব্যক্তির হাতে। দুজন মিলে তরুণীকে কংশ নদীর পারে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তিনজন মিলে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
নিহতের বাবা দুলাল মিয়া জানান, তার মেয়ে বাড়িতে না ফিরলে ভেবেছিলেন স্বজনদের বাড়িতে গেছে। কিন্তু পরে পুলিশ তাদের জানায় তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তার মেয়েকে ওই বৃদ্ধ করেছে সে বিষয়টিও তারা জানতেন না। হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি চান তিনি।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ‘তরুণীকে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করতে থাকে ওই বৃদ্ধ। স্ত্রীর মর্যাদা চাইলে ডাবল গেইম খেলে। তরুণীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া ও ভাইয়ের সঙ্গে জমির বিরোধ থাকায় ভাতিজাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো উদ্দেশ্যই সফল হয়নি।’
মন্তব্য করুন