চট্টগ্রাম নগরের পানি নিস্কাশনের প্রধান দুই মাধ্যম চাক্তাই ও রাজাখালী খাল। খাল দুটো দখলের মাধ্যমে সংকুচিত করে ফেলেছে ১২৬ অবৈধ দখলদার। কেউ ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। কেউ স্থাপনা তুলে ব্যবসা করছেন। দখলদারদের তালিকায় আছে খালগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও (চসিক)। খালের জায়গায় চসিক গড়ে তুলেছে বাজার ও চারতলা ভবন।
২০১৫ সালে খাল দুটির অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত ও তালিকা তৈরি করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু পাঁচ বছর পেরোলেও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খাল দুটির অবৈধ দখলদারদের ৯০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত বুধবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
চাক্তাই খালের দখলদার কারা :২০১৪ সালের ১৬ জুলাই নদী সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের এক বৈঠকে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিটির তালিকা অনুযায়ী, চাক্তাই খাল দখল করে আছে ৬৫ জন। চাক্তাই খালের ডান তীরে বাকলিয়া এলাকায় দখল করে দোকান গড়ে তুলেছেন আমির হোসেন, আবদুল বারেক, জসিম উদ্দিন, হাজী আমিনুল হক, হাজী রেজোয়ান ইসলাম, আহম্মদ হোসেন ও বাহাদুর। এ ছাড়া টিনশেড ঘর রয়েছে কাউন্সিলর শহীদুল আলম, মো. ইউছুফ, মো. রফিক, শামসুল হক, বশির আহম্মদ, মো. ইউসুফ, আবদুছ ছালাম, নুরুল আমিন, জামাল আহাম্মদ, মাহবুব হোসেন, মো. নাছের ও মনির আহম্মদের।
আবাসন প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল দখল করেছে ৮০ বর্গফুট জায়গা। খাল ভরাট করে চসিক গড়ে তুলেছে চারতলা ভবন। বর্তমানে রাজস্ব সার্কেল-২-এর কার্যালয় রয়েছে এখানে। চাক্তাই খালের জায়গা ভরাট করে গড়ে উঠেছে বহদ্দারহাট বাজার। বাজারটির পরিচালনায়ও রয়েছে চসিক। মধ্যম চাক্তাইয়ে খালের জায়গায় গড়ে উঠেছে এনামুল হকের পাঁচতারা বাণিজ্যালয়, মোহাম্মদ আলমগীরের মাওলা স্টোর, জয়নাল আবেদীন আজাদের জেবি ট্রেডার্স, বাদল দেবের এ এম ট্রেডিং, দেব প্রসাদ চৌধুরীর মেসার্স সুভাষ স্টোর, আবদুল করিমের মামুন ব্রাদার্স, স্বপন বিশ্বাসের হাজী ছালাম অ্যান্ড সন্স, মঈনুল আলমের টিনের দোকান ও মো. শাহজাহানের এস কে ট্রেডিং। আবু বক্কর চৌধুরী এবং নীল কৃষ্ণ দাশ মজুমদারও গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
রাজাখালী খালের দখলদার কারা :৫৪ জনের দখলে রয়েছে চট্টগ্রামের নগরের আরেকটি প্রধান খাল রাজাখালী খাল। এই খালের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে সেমিপাকা ঘর ও তেলের গোডাউন গড়ে তুলেছেন ফরিদ চেয়ারম্যান, ফরিদ সওদাগর, আক্তার সওদাগর, শফিউল আজম, বাবুল হাজী, মো. নাছের ও আবুল কালাম। রাজাখালী খালের উত্তর-পশ্চিম পাড়ে খালের জায়গা দখল করে সেমিপাকা ঘর, গোডাউন, রাইস মিল, ভবন, খাদ্যের মিল ও মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন হাজী সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, হাজী আবদুল ছোবহান গং, হাজী নবী হোসেন সওদাগর, বাদশা মিয়া চৌধুরী, সালাউদ্দিন, টাইগার ফরিদ, জামাল সওদাগর, পিউরিটি ময়দার মিল, ওসমান সওদাগর, আশু বাবু, কালাম সওদাগর, মো. এমরান, শাহীন স্টোর, গফুর ভিউ, জাফর, সিরাজ, আব্দুল খালেক, আব্দুল মালেক ও নূরুল ইসলাম সওদাগর।
দখলদাররা যা বলেন : শাহ আমানত স্টোরের মালিক নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, 'জায়গাটি খালি পড়ে আছে। তাই দোকানের পণ্য রাখতে অসুবিধা হওয়ায় স্থাপনা করে পণ্য রেখেছি। কর্তৃপক্ষ যখন চাইবে তখন ভেঙে দেওয়া হবে।'
জেবি ট্রেডার্সের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ বলেন, 'জায়গাটা খোলা ছিল। কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে।' তালিকা অনুযায়ী, চাক্তাই খালের ৮০ বর্গফুট জায়গা দখল করে রেখেছেন সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহীদুল আলম। তবে তিনি বলেন, 'খালের কোনো জায়গা আমার দখলে নেই। যদি দলিল অনুযায়ী জায়গা পেয়ে থাকেন, নিয়ে যাবে।'
যা বলছেন কর্তৃপক্ষ :এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম বলেন, 'চসিক খাল ভরাট করে স্থাপনা করেছে, এমন কিছু আমাদের জানা নেই। খালের জায়গায় সিটি করপোরেশনের ভবন আছে এমন কোনো তালিকা জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি।'
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে বলেন, 'বিষয়টি জানা নেই। খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন বলেন, 'খালের তীরের কোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তালিকাও আমাদের দেওয়া হয়নি।'