
সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে থেমে থেমে যানজট ও যানবাহনের ধীরগতি কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না ঢাকা-উত্তরের যাত্রীদের। জেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সওজের ফোর লেন (চাররাস্তা) উন্নতীকরণ প্রকল্পের কারণে নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে গত ক’দিনের সৃষ্ট কৃত্রিম যানজট ও ধীরগতি।
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সেতুর পশ্চিমে চাররাস্তা কাজের পাশাপাশি একই মহাসড়কের কড্ডা, সীমান্তবাজার ও পাঁচিলায় আন্ডারপাস ফ্লাইওভারসহ সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এদিকে প্রকল্পের তদারকিতেও ঘাটতি রয়েছে। করোনার অজুহাতে মেয়াদ বাড়ানোর কারণে প্রকল্পে ধীরগতিও রয়েছে।
আশির দশকে এ মহাসড়কের ফুলজোড় নদীর ওপর ‘নলকা সেতু’ নামে একটি সরু সেতু রয়েছে। সেতুটি বর্তমানে ভঙ্গুর ও জরাজীর্ণ। এরই পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের কাজও চলছে প্রকল্প থেকে। নতুন সেতুর মূল অবকাঠামো শেষ হওয়ায় উভয়দিকে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে যানজট-ধীরগতির কারণে যাত্রী দুর্ভোগও বাড়ছে। ধীরগতি ও যানজট পাশের অন্য দু’টি মহাসড়কেও আচর পড়ছে। আসন্ন ঈদের আগে যাত্রী দুর্ভোগ আরো কয়েকগুণ বাড়ারও আশঙ্কাও করছেন যাত্রীরা।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) মো. সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চার লেনে প্রশস্তকরণ কাজের জন্য রাস্তার দুপাশে খোঁড়াখুঁড়ি ও মাটি ভরাটের কাজ চলছে। পাশাপাশি পুরাতন নলকা সেতুর পাশে আরেকটি নতুন সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সেতুর পূর্ব পাশের পুরাতন সড়কটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে যানবাহনগুলো এক লেনে চলছে। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ও ধীরগতি লেগেই থাকছে।
বুধবার সেতুর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে ও সেতুর ওপর দু’টি দুর্ঘটনার কারণে বুধবার সকাল থেকে সেতুর দু’পাড়েই যানজট দেখা দেয়। তিন দিনের ছুটির কারণে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেমে থেমে যানবাহন চলে। শুক্রবারও সকাল থেকে ও কড্ডার মোড়, সীমান্তবাজার, নলকা ও পাঁচিলায় যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। রাস্তার ধুলোবালি ও যানবাহনের চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঈদের আগে সেতু নির্মানের কাজ শেষ না হলেও দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ‘সওজের ফোর লেন কাজের জন্য ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। নলকা সেতুর কারণেও যানজট ও ধীরগতি বাড়ছে। আগামীতে হাটিকুমরুল মোড়ে সাসেক প্রকল্প থেকে ‘ক্লোভারলিপ ইন্টারচেঞ্জ ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও সমস্যা আবারও বাড়বে।’
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘যতদিন মহাসড়কে নির্মাণ কাজ চলবে, ততদিন মহাসড়কে যানজট ও ধীরগতি লেগেই থাকবে। নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ থেকে ত্রাণ পাওয়ার সুযোগ নেই। রাতদিন নিরলসভাবে কাজ করে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বড়হর গ্রামের বাসিন্দা চট্টগ্রাম ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মী মাহমুদুল হাসান বাবলা শুক্রবার জানান, ‘তিন দিনের ছুটিতে বাড়ি আসতে বঙ্গবন্ধু সেতুর দু’পাড়েই যানজটের কবলে পড়ি। বৃহস্পতিবার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে কামারখন্দের ভদ্রঘাট গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে প্রতিদিনই নলকা, পাঁচিলা ও সীমান্তবাজার এলাকায় ২০ কিলোমিটারে যানজট ধীরগতি দেখছি। শুক্রবার সকাল থেকেও যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। ধীরগতি ও যানজটের কারণে হোন্ডা রাইডাররাও প্রায় তিনগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
জানা গেছে, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতির জন্য টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের নির্মাণকাজ চলছে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্পের মাধ্যমে। উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে দেশ-বিদেশের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশের কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হেগো-মীর আখতার নামের জয়েন ভেঞ্চার কোম্পানি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (পিএম) এখলাছ উদ্দিন শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘অতীতের যানজট, ধীরগতি ও জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা খুব দ্রুত কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের আগেই সেতুটি উন্মুক্ত করার প্রয়াস রয়েছে। সে লক্ষ্যেই আমরা রাতদিন পরিশ্রম করছি। মহাসড়কটি সংস্কারে প্রথমে ৩ বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু করা হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যেই ৫০ ভাগ মূল সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। সেতু, কালভার্ট, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস ও ওভারপাস তৈরি ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। নলকা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।’
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, ‘ঢাকার প্রকল্প অফিস থেকে এ প্রকল্পের টেন্ডার করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের দেখভালও তারাই করছেন। আমাদের কাছে প্রকল্পের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।’
সওজের সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ওয়ালিউর রহমানের মুঠোফোনে শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে মাঠ পর্যায়ে তদারকি কাজের সওজের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী নন, বিবিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে। যানবাহনও যানবাহনের ধীরগতি এড়াতে নলকা সেতুটি আগামী ১৪ এপ্রিল উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিনরাত কাজ করানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন