দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পারাপার হতে আসা পণ্যবাহী ট্রাক চালক ও হেলপারদের। এ সব ট্রাকের ফেরির নাগাল পেতে দৌলতদিয়া ঘাট অভিমুখে মহাসড়কে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত নৌপথ। এ নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পদ্মা নদী পারাপার হয়। তবে বর্তমানে নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। এতে ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন পারাপার। এতে করে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নদী পারের অপেক্ষায় মহাসড়কে আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন। যাত্রী দূর্ভোগ কিছুটা কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করায় দিনের পর দিন মহাসড়কে সিরিয়ালে আটকা থাকছে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো।

শুক্রবার দুপুরে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল পণ্যবাহী ট্রাকের সারি। এছাড়াও দৌলতদিয়া ঘাটের সিরিয়ালের দীর্ঘতা কমাতে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মাহসড়কের অন্তত ২ কিলোমিটারজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের সিরিয়াল দেখা যায়। এ সময় সড়কের খোলা আকাশের নিচে তীব্র গরমে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চালক ও সহকারীরা। পাশাপাশি তাদের খাবার, গোসল ও টয়লটের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অপরদিকে সময় মত মালামাল পরিবহন করতে না পেরে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ নৌরুটে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। এছাড়াও দৌলতদিয়ায় সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ঘাট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। নতুন করে নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ৬ নম্বর ঘাটটিও বন্ধ। ৩, ৪, ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এর মধ্যে মধ্যে দুয়েকটি ঘাটও বিভিন্ন কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ফেরিঘাটের এপ্রোজ সড়কগুলো নিচু হয়ে গেছে। ফলে যানবাহন লোড আনলোডে সময় বেশি লাগছে।

ট্রাকচালক ইসলাম মিয়া, আলমগীর হেসেন, আমজাদ গাজীসহ কয়েকজন জানান, দুই দিন আগে এসে গোয়ালন্দ মোড়ের সিরিয়ালে আটকে রয়েছেন তারা। তারা বলেন, তীব্র গরমে খোলা আকাশের নিচে থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছি। এখানে খাবার, গোসল ও টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা নেই। এখান থেকে ঘাট প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। কবে কখন ফেরি পাব তা বলতে পারছি না।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট সহকারী ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) প্রফুল্য চৌহান বলেন, এ নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করছে। নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় ফেরিতে লোড-আনলোডে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন জানান, আসন্ন রমজান উপলক্ষে বেনাপল বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অতিরিক্ত ট্রাক গত কয়েক দিন ধরে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত দৌলতদিয়া দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ ১২০০ ট্রাক নদী পারাপার করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৭০০ ট্রাক নদী পার হতে আসছে। এতে করে নদী পারের অপেক্ষায় ট্রাকগুলোকে সিরিয়ালে আটকে থাকতে হচ্ছে।