পিয়া আক্তার নামে এক রোগীর সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বি-নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। বিপ্লব চন্দ্র সরকার নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছায় ওই রোগীকে রক্ত দান করেন। কিন্তু সেই রক্ত ওই রোগীর কাছে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার নিউ পদ্মা ডিজিটাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন পিয়া আক্তার।

এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার দিনভর দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গাজীপুর ও এর আশপাশের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী সংগঠন।

খবর পেয়ে সকালে হাসপাতালের সামনে এসে জড়ো হন তারা। পরে নানা স্লোগানে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা এ ঘটনার কঠিন বিচার দাবি করে হাসপাতালের সামনের সড়কে মিছিল করেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় দান করা রক্ত রোগীর স্বজনের কাছে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। রক্তদাতা সংগঠন সিএইচবি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পারভেজ প্রধান সমকালকে বলেন, গাজীপুর ও আশপাশের ৩০টি রক্তদাতা সংগঠনের লোকজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে হাসপাতালের সামনে এসে জড়ো হন।

তিনি বলেন, পিয়া আক্তারের স্বামী বিজয়ের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে টাকার বিনিময়ে রক্ত বিক্রির বিষয়টি জানার পর বিক্ষুব্ধ হয় রক্তদাতা বিভিন্ন সংগঠন।

ওই ভিডিওতে রোগীর স্বামী জানান, প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য সাত হাজার টাকা দাবি করে। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রক্ত কেনা বাবদ ছয় হাজার টাকা পরিশোধ করতে অনুরোধ করেন।

ভিডিওতে তিনি বলেন, রক্তদাতা ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখাও হয় তখন। রক্তদাতাকে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে রক্ত কেনার বিষয়টি আমি জানাই। তখন ওই রক্তদাতা টাকার বিনিময়ে রক্ত বিক্রি করেননি বলে জানান আমাকে।

গত বুধবার বিকেল ৩টার দিকে মাওনার নিউ পদ্মা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এক ব্যাগ রক্ত দান করেন বিপ্লব সরকার। এর বিনিময়ে তিনি কোনো অর্থ  নেননি বলে দাবি করেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আন্দোলন চলে। পরে খবর পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম হাসপাতালে ছুটে আসেন।

তিনি সমকালকে বলেন, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একইসঙ্গে ওই রোগীর  চিকিৎসা বিনা পয়সায় ও পরিশোধ করা ছয় হাজার টাকা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও বলেন, এ ঘটনার জন্য হাসপাতাল মালিক শাহাব উদ্দিন সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।