- সারাদেশ
- খুলনা বিএনপিতে শক্তিশালী হচ্ছে বকুল গ্রুপ
খুলনা বিএনপিতে শক্তিশালী হচ্ছে বকুল গ্রুপ
মঞ্জু-মনির অনুসারীরা ঝিমিয়ে পড়ছেন

নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে ক্রমেই খুলনা মহানগর বিএনপিতে শক্তিশালী হচ্ছে রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী গ্রুপ। এরই মধ্যে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির অনুসারীদের অনেক নেতাকর্মী বকুল গ্রুপে যোগ দিয়েছেন। নগরীর প্রতিটি ভোটকেন্দ্র, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। আর ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়ছে মঞ্জু-মনির অনুসারী গ্রুপ। গত এক মাস ধরে তাদের দৃশ্যমান বড় কোনো কর্মকাণ্ড নেই।
রকিবুল ইসলাম বকুল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এবং বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি নতুন আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য। মঞ্জু গ্রুপের নেতাকর্মীরা তাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের জন্য বকুলকে দায়ী করে আসছেন।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, তারা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির সভা করে শিগগির নগরীর ৮টি থানায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কমিটি গঠনের বিষয়টি তদারকির জন্য ৮টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের তথ্য সংগ্রহ করবে।
তিনি জানান, দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে প্রথমে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক ইউনিট কমিটি, এরপর কাউন্সিল অথবা সমন্বয়ের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি এবং সর্বশেষে থানা কমিটি গঠন করার জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। চলতি মাস থেকেই ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে, এরপর হবে ওয়ার্ড কমিটি। রমজান মাসেও তারা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় তারা এখন মহানগর বিএনপির নেতৃত্বেই সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক, তারিকুল ইসলাম জহিরকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্র থেকে মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ১ মার্চ কেন্দ্র থেকে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে ১৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৫৩ জনকে সদস্য করা হয়।
কমিটি থেকে বাদ পড়েন মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। শুধু তাই নয়, মঞ্জু-মনি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান মুরাদ, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নুর মতো সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের বাদ রাখা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা সমকালকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে ওই নেতাকর্মীরা দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। যারা আমাদের মানেন না, তাদের কমিটিতে নিয়ে কী করব?
নেতাকর্মীরা জানান, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে রকিবুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রেহানা ঈসা, বদরুল আনাম খান ও চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের পদ পেয়েছেন। এ ছাড়া ওয়াহিদুর রহমান দীপু, সাজ্জাদ হোসেন তোতন, নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নু, শরিফুল আনাম, আফসার উদ্দিন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ফ্ক্রিয় নেতা কাজী মো. রাশেদ ও কাজী মাহমুদ আলী যুগ্ম আহ্বায়কের পদ পেয়ে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
এদিকে মহানগর যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগে থেকেই বকুল গ্রুপের অনুসারী। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর মহানগর মহিলা দল ও শ্রমিক দলের নেতারাও অনেকে বকুল গ্রুপে ভিড়েছেন।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সহসভাপতি রেহানা ঈসা সমকালকে বলেন, আমি গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি ব্যক্তিগত কারও দল করি না। সে কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে আমি তাদের সঙ্গেই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছি।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, রকিবুল ইসলাম বকুল গ্রুপের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে মঞ্জু-মনি গ্রুপের নেতাকর্মীরা নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। গত এক মাসে এই গ্রুপের বড় কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি।
তবে এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমকালকে বলেন, কেউ নিষ্ফ্ক্রিয় হয়নি, তাকে দলের পদ থেকে বাদ দেওয়ায় অনেক নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া তাদের নতুন কমিটি দল থেকে দূরে রেখেছে। তিনি বলেন, আহ্বায়ক কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিএনপির চতুর্থ-পঞ্চম সারির নেতা, অঙ্গসংগঠনের নেতা। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অনেকেরই কোনো ভূমিকা নেই।
মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি দাবি করেন, তারা নিয়মিত দলের কর্মকাণ্ড করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানিয়েছিলেন; কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এখনও কোনো সাড়া পাননি। কেন্দ্রীয় কমিটি নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেবে বলে তারা আশাবাদী।
মন্তব্য করুন