- সারাদেশ
- কারাগারে নয়, স্বজনের জিম্মায় ওরা
কারাগারে নয়, স্বজনের জিম্মায় ওরা

৭০ শিশুকে ডায়েরি, ফুল ও জাতীয় পতাকা দেওয়া হয়েছে - সমকাল
কেউ খেলার ছলে, কেউবা বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ছোটখাটো অপরাধে যুক্ত হয়। চুরি-মারামারির মামলায় কেউ কেউ জেল খেটেছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছর। অনেকেরই নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় মন খারাপ হতো। বিব্রত হতেন অভিভাবকরাও। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আদালত এমন ৭০ শিশুকে সংশোধনের জন্য বাবা-মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন। তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পতাকা, ফুল ও ডায়রি।
সোমবার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক জাকির হোসেন এই ব্যতিক্রমী রায় দেন। বিভিন্ন সময় দায়ের হওয়া ৫০ মামলার আসামি এ শিশুরা এখন মা-বাবার কাছে মানবিক গুণাবলি নিয়ে বেড়ে উঠবে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পালন করতে হবে তাদের।
শহরের নর্থ ইস্ট আইডিয়াল কলেজের এক শিক্ষার্থী জানায়, কলেজের পাশের বিসিক মাঠে মারামারির সময় বন্ধুদের সঙ্গে ছিল। মারামারিতে না থাকলেও আসামি হয়ে দেড় বছরে ২৫ বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। আদালত মা-বাবার জিম্মায় সংশোধনের সুযোগ দেওয়ায় সে খুশি। যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা সে পালন করবে।
জগন্নাথপুরের চিলাউড়া নয়াপুঞ্জি এলাকার আরেক কিশোর বলে 'আমরা গরিব মানুষ, কাম-কাজ কইরা খাই। গাঁওয়ে মারামারি অইছে হকলের লগে, আমারেও আসামি দিছে। যেদিন হাজিরা দিতে আইতাম, ইদিন আর কামও যাইতাম পারতাম না। মা-বাপ বড় বেশি চিন্তাত আছলা। আজকে জজ সাবে মুক্তি দিছইন। তানরা যে লাখান চলার কথা কইছইন, ইলাখানঔ চলমু।'
শর্তগুলো হলো- নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো কাজ করা এবং ডায়রিতে তা লিখে রাখা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা, সবার সঙ্গে সদ্ভাব এবং ভালো ব্যবহার করা, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা, তাদের সেবাযত্ন ও কাজে সাহায্য করা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ও মাদক থেকে দূরে থাকা, ভবিষ্যতে কোনো অপরাধে না জড়ানো। এসব শর্ত প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রতি তিন মাস অন্তর আদালতকে জানাবেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রবিউল লেইছ রোকেস বললেন, এ রায়ে অনেক মামলার দীর্ঘসূত্রতার অবসান হলো। শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল। এখন শর্ত মেনে চললেই সংশোধিত হবে ওরা।
একই আদালত আগে তিন দফায় ৯৫ মামলায় ১৩৩ শিশুকে প্রবেশন দিয়ে মামলা থেকে নিস্কৃতির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দিয়েছে।
মন্তব্য করুন