'আমার আর কিছুই রইল না, স্মৃতি-আরোহী ছিল আমার সংসারের প্রদীপ। নিভে গেলো সেই প্রদীপ। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো?'  শিশুকন্যা আরোহীর মরদেহ জড়িয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন বাবা জয়রাম রাজবংশী। 

রোববার দুপুরে শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে বন্দরের হরিপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট ঘাট থেকে ৩ বছরের আরোহী রানীর মরদেহ উদ্ধার হয়।


তার আগে রোববার জয়রাম রাজবংশীর কলেজপড়ুয়া মেয়ে স্মৃতি রানীর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। সোমবার রাতে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তার সৎকার হয়। এখন ছোট মেয়ে আরোহীর মরদেহ সৎকারের প্রস্তুতি চলছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ইসমানিরচর গ্রামের দুই বোন স্মৃতি ও আরোহী ছিল শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী। অকস্মাৎ দুই মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা জয়রাম রাজবংশী ও মা শিখা রানী। 

স্মৃতির লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও তার ছোটবোন আরোহীকে পাওয়া যাচ্ছিল না। মেয়ের খোঁজে গত দুইদিন শীতলক্ষ্যার তীরে বিলাপ করছিলেন বাবা জয়রাম। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে পেলেন আরোহীর নিথর দেহ।

স্মৃতি- আরোহীর মেসো রিপন বর্মণ বলেন, 'প্রায়ই নারায়ণগঞ্জের বন্দরের একরামপুরে আমাদের বাড়িতে আসত তারা। ক'দিন থেকে আবার নিজেরাই চলে যেত। রোববার দুপুরে তারা দু'বোন আমাদের বাড়ি থেকে মুন্সীগঞ্জে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হয়। বিকেলে খবর নিয়ে জানি তারা বাড়িতে পৌঁছায়নি। পরে সংবাদ পাই শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ছবি দেখালে স্মৃতির খোঁজ পাই। উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। আরোহী নিখোঁজ ছিল। দুই দিন পর তার মরদেহ পাওয়া গেল।'


আরোহীর মাসি শিপ্রা রানী বলেন, 'আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল দুই বোন। আমি নিজের হাতে মামনি আরোহীকে ভাত খাওয়া দিলাম। ভগবান এ কোন শাস্তি দিলো। ওদের সুন্দরভাবে লঞ্চ উঠাইয়া দিলাম। এর কিছু সময় পর জানতে পারলাম সেই লঞ্চ ডুবে গেছে। গঙ্গা মার কাছে দুইদিন প্রার্থনা করলাম আমাদের আরোহীকে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু আরোহী তো আমার কোলে আসে না, ও ঘুমাইয়া রইছে। আমার বোনের এখন কি হইবো!'

এরআগে, রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী ওই লঞ্চে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছে নৌ-পুলিশ। যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকেন বেশ কয়েকজন।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। সোমবার ভোরে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ পানির নিচ থেকে লঞ্চটিকে টেনে তুলে তীরে নিয়ে রাখে।

কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর মাস্টারকে মুন্সীগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ থেকে সব পথে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।