সিলেট জেলা বিএনপির বহুল প্রত্যাশিত সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে নাটকীয়তার অবসান হলো। নিজেকে ‘বিএনপি বাগানের মালি’ দাবি করে হাইকমান্ডের নির্দেশে সভাপতি পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে স্থগিত কাউন্সিল আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফ অতীতে সিলেট মহানগর বিএনপির রাজনীতি করলেও এবারে তিনি জেলা সভাপতি হতে চেয়েছিলেন।

মঙ্গলবার নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ পদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আব্দুল গাফফারও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত সোমবার নগরীর ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু আগের দিন রোববার ‘অনিবার্য কারণবশত’ তা স্থগিত করা হয়। বহুল প্রত্যাশিত সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিতের জন্য সময়মতো ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে না পারার কথা বলেছিলেন বিএনপি নেতারা। 

এই কাউন্সিলে মেয়র আরিফ ছাড়াও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে ছয়জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে আবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। এতে আরও কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। এসবের নেপথ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের ইন্ধন রয়েছে বলে মেয়র আরিফের ঘনিষ্ঠজনের দাবি। 

মেয়র অনুসারী জেলা বিএনপির এক নেতা সমকালকে বলেছেন, খন্দকার মুক্তাদির মেয়র আরিফের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে কাউন্সিল পেছাতে বাধ্য হয়েছেন। মেয়র থাকলে উনার পছন্দের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভব ছিল না।

মেয়র আরিফের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে সোমবার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক টিমের প্রধান ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বৈঠকে চলতি মাসের মধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। 

মঙ্গলবার বিকেলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার সমকালকে বলেন, আগামী ২৯ মার্চ সম্মেলন ও কাউন্সিল করার অনুমতি চেয়ে মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন তারা।

'আমি বিএনপি বাগানের মালি' 

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফ বলেন, 'আমি বিএনপি বাগানের মালি হয়ে আমার সারাজীবনের রাজনৈতিক জীবন চালিয়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পে বলিয়ান। এ অবস্থায় হাইকমান্ডের নির্দেশনার আলোকে আসন্ন সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতির পদ থেকে আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।' 

তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহে পথে পথে, রাত গভীরে, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে যে মমতার নিদর্শন নেতাকর্মীরা দেখিয়েছেন, তাতে আমি বিমুগ্ধ এবং আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ। এই ভালোবাসার প্রতিদান নেই, হতে পারে না। আমি কেবল বলতে চাই- বিএনপি ছাড়া আমার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। '

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে মেয়র আরিফ মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছেন বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট বিএনপির আধিপত্য নিয়ে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে মেয়র আরিফের বিরোধ দেখা দিয়েছে।

মেয়র আরিফ বলেন, 'বিএনপি আমাকে অনেক দিয়েছে। একজন জাগদল সমর্থক থেকে ছাত্রদল কর্মী হয়ে আজ আমি মেয়র আরিফ। আমি কখনও ভুলে যাই না, দুই দু'বার মেয়র হতে ভোটের লড়াইয়ে আমার প্রিয় নেতাকর্মীরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কী মরণপণ লড়াই করেছেন।' সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ও ঋণদান বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ মকন মিয়া, সালেহ আহমদ খসরুসহ মেয়র আরিফের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।