দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ঝিনাইদহের সনাতনপুর বাঁওড় প্রকল্প বাতিল করে বাঁধ উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করছে প্রশাসন। অন্যদিকে মৎস্যজীবীদের দাবি, ঈর্ষান্বিত একটি মহল ব্যক্তি স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে বাঁওড় ও মৎস্য জলাশয় রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন এলাকার মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে সনাতনপুর বাঁওড়ের বাঁধের ওপর মানববন্ধন করে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

জানা যায়, নবগঙ্গা নদীর একটি অংশ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গিলাপোল ও রাধানগর গোফপাড়ার পশ্চিম পাশ ঘেঁষে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। এর পর নদীটি রাধানগর গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বাঁক নিয়ে রাধানগর গ্রামের পাশ দিয়ে শহরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর, আলমডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা এলাকার নবগঙ্গা নদী হয়ে ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের মোড় থেকে ভেড়াখালী গ্রামের পাশ দিয়ে ইউ আকৃতির বাঁকে পৌঁছলে পানিপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ওই অবস্থায় পানি নিস্কাশন না হয়ে পুনরায় ওই পানি এলাকার সংযোগ খাল দিয়ে ফসলের ক্ষেতে ঢুকে প্লাবিত করত। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড আশির দশকের শেষ দিকে একটি প্রকল্প নেয়। যে প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৯৭৮ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গিলাপোল গ্রামের মাঝ দিয়ে ৮০০ মিটার নতুন সংযোগ খাল খনন করা হয়। সংযোগ খালটি পশ্চিমে হরিণাকুণ্ডুর সনাতনপুর ভূঁইয়াপাড়া থেকে পূর্ব পাশে রাধানগর ও গিলাপোল অংশ দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ভেড়াখালী-রাধারগর ইউ আকৃতি অংশের মাথায় এবং গিলাপোল-ভূঁইয়াপাড়া মাথায় দুটি বাঁধ দেওয়া হয়। এতে বাঁধ দেওয়া অংশ মরা খালে পরিণত হয়। বাঁধ দেওয়া নদীর অংশটুকু সাইরাতভুক্ত করা হয়। এর পর ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া অংশ সংস্কার করে সনাতনপুর বাঁওড় নামকরণ করে ১৯৯২-৯৩ সালে এলাকার মৎস্যজীবীদের কাছে ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত এই ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর জলাকরের পরিমাণ ৪২ একর। এখানে মাছ চাষ করে প্রায় ১০০টির অধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে এবং সরকার প্রতি বছর এই প্রকল্প থেকে অন্তত ৬ লাখ টাকার রাজস্ব পেয়ে আসছে। অথচ প্রশাসন জনস্বার্থের কথা বলে বাঁওড়ের বাঁধ উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এলেম মণ্ডল বলেন, বিশেষ একটি মহল এলাকার কিছু মানুষকে সামনে রেখে প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে এই প্রকল্প বন্ধ করে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

সমিতির সভাপতি দৈলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, এই জলাশয় পুনরায় উন্মুক্ত করে দিলে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো পথে বসবে।

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম জানান, কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জলাশয়ের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য মতামত চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।