দলবল নিয়ে আকলিমা খাতুনের নির্মাণাধীন বসতবাড়িটি ভাঙার জন্য হাজির হন চাচাতো ভাই মাসুদ রানা। মাসুদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে মাসুদ ইট দিয়ে গাঁথা দেয়াল ভাঙা শুরু করলে আকলিমার ষাটোর্ধ্ব মা মনোয়ারা বেগম দূর থেকে ঘরটি না ভাঙার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু মাসুদের কানেই পৌঁছায়নি বৃদ্ধা মনোয়ারার নিচু স্বরের আওয়াজ।

একপর্যায়ে অনুরোধ করতে কাছে এগিয়ে যেতেই মাসুদ ওই বৃদ্ধার বুকের ঠিক মাঝখানে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। তার মাথার এক অংশ থেঁতলে যায় পড়ে থাকা ইটের আঘাতে। শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামে সোমবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয় মঙ্গলবার।

বৃদ্ধার বুকে যুবকের লাথির ওই দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর নিন্দার ঝড় উঠে গাজীপুর ও আশপাশের এলাকায়। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়ার ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের নেতারা। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে।

ভাতিজার লাথির পর মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন চাচি

জানা যায়, উত্তর পেলাইদ গ্রামের আবদুল হাইয়ের কাছ থেকে তার মেয়ে আকলিমা আক্তার ৩৫ শতাংশ জমি কেনেন বছর ছয়েক আগে। আকলিমার স্বামী রফিকুল ইসলাম তখন সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে কেনা ওই জমিতে একটি বাড়ি তৈরি শুরু করেন।

নির্মাণকাজ প্রায় শেষ প্রান্তে আসার পর আবদুল হাইয়ের ভাতিজা মাসুদ রানা ওই জমির অংশ পাবেন বলে দাবি করেন। মাসুদের বাবার নাম নজরুল ইসলাম। একপর্যায়ে সোমবার বিকেলে ওই বাড়ি ভাঙার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হাজির হন মাসুদ। বাড়ি না ভাঙতে অনুরোধ করার জন্য কাছে যেতেই ভাতিজা (দেবরের ছেলে) মাসুদ বৃদ্ধা মনোয়ারার (আকলিমার মা) বুকে প্রকাশ্যে লাথি মারেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মনোয়ারা। ইটের আঘাতে মাথা থেঁতলে যায় তার।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়ার ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতনে শিকার মনোয়রার স্বামী আবদুল হাই বাদী হয়ে মঙ্গলবার সকালে ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন। 

আকলিমা খাতুন জানান, নির্মাণাধীণ বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় মা বাধা দিতে এগিয়ে গিয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাসুদ মা’র বুকে সজোরে লাথি মারে। ইটের আঘাতে মাথা থেঁতলে যায়। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে মাসুদ ও তার সহযোগীরা নানা হুমকি দেয়। এ সময় মাসুদ কুড়াল দিয়ে বিল্ডিংয়ের তৈরি করা দেওয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন, এই সভ্য সমাজে বসবাস করে এমন অসভ্য কাজ কোনোভাবেই মানার মতো নয়। এমন একজন প্রবীণের বুকে এভাবে লাথি মারা খুবই বর্বর।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ভেঙে ফেলা বাড়ির কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।