সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুনে পুড়ে নয়, কুমিল্লায় নববধূ ইয়াসমিন আক্তার (২২) প্রাণ হারান তার স্বামী রেজাউল করিমের হাতে। 

পারিবারিক কলহ ও যৌতুক না পেয়ে গত ১১ মার্চ ভোরে জেলার বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী এলাকায় ইয়াসমিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রেজাউল। এরপর মরদেহ খাটে রেখে ইয়াসমিনের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘরে যখন স্ত্রীর মরদেহ পুড়ছিল রেজাউল তখন ঠান্ডা মাথায় ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। 

পরে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত করেন। ইয়াসমিন হত্যার ঘটনায় সোমবার গভীর রাতে কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লার শাকতলার র‌্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। 

এর আগে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় নববধূ ইয়াসমিন আক্তারের।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ জানুয়ারি বরুড়া উপজেলার ঢেউয়াতলী গ্রামের আলতাফ মিয়ার ছেলে প্রবাসফেরত রেজাউল করিম চাঁদপুরের মতলব উপজেলার দক্ষিণ ডিংগাভাঙ্গা গ্রামের মৃত আক্তার মুন্সীর মেয়ে ইয়াসমিন আক্তারকে প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ে করেন। পারিবারিক কলহ ও যৌতুক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বিয়ের পরপরই তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো।

এ নিয়ে একাধিক সালিশ-বৈঠক হয়। কলহের জের ধরে ১১ মার্চ রাতে রেজাউল দুই দফায় স্ত্রীকে মারধর করে জখম করেন। মৃত্যুর আগে শরীরের বিভিন্ন স্থানের জখমের ছবি পরিবারের কাছে ইমোতে পাঠান ইয়াসমিন।

র‌্যাব জানায়, কেরোসিনের আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নেভানো শুরু করে। রেজাউলও বাড়িতে এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। কিন্তু ততক্ষণে ঘরসহ খাটে থাকা ইয়াসমিন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান।

এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই রাকিব হাসান। এদিকে হত্যাকাণ্ডের আগে ইয়াসমিনের ওপর স্বামীর নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ছাড়াও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করার পর রেজাউল ও পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালান। 

বিষয়টি ছায়া তদন্তের জন্য মাঠে নামে র‌্যাব। সোমবার রাতে রেউাজলকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, আত্মগোপনে থেকে বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন রেজাউল করিম। গ্রেপ্তারের পর তাকে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে বরুড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব।

বরুড়া থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার সমকালকে বলেন, রেজাউল করিমকে আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।