১৯৯৬ সাল। বনানীর আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের জন্ম। সেখানে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলত নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। ক্লাবটি পরিণত হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ও গ্যাং লিডারদের আখড়ায়। ক্লাবের পাশেই বনানী জামে মসজিদ। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ করলেন ক্লাবের অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। শুরু হলো দ্বন্দ্ব। 

এর জের ধরে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে প্রকাশ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে গেল সোহেল চৌধুরীর। আজিজ সেসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে নিয়মিত ওই ক্লাবে যেতেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সোহেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে বান্টি ও আশীষকে অনুরোধ জানালেন। তারা সোহেলকে হত্যা করার জন্য প্রস্তাব দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে। প্রস্তাবে রাজি হন ইমন। সে বছর ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি আশীষ রায় চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এভাবেই হত্যার কারণ বর্ণনা করেছেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব। 

র‍্যাব বলছে, আশীষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয় ট্রাম্পস ক্লাব। ক্লাবে যাতায়াতের সুবাদেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে। এই তিনজন ক্লাব ব্যবহার করে সেসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ আশীষকে গ্রেপ্তার করে। সংস্থাটি বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারণসহ সোহেল হত্যায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন আশীষ।

র‍্যাব বলছে, গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে আশীষকে গ্রেপ্তারের অভিযানে ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, ১টি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, ২টি আইফোন ও ২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানিয়েছে, গত ২৮ মার্চ আশীষের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এর আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। 

উল্লেখ্য, হত্যার ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি। ২০০১ সালে ৩০ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করেন। আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন। গত ২৮ মার্চ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।