পাঁচ দিন জ্বরে ভুগে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন বইলর বাঁশকুড়ির শিউলি বেগম। টিকিট নিতে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট পান তিনি। কাউন্টারে ৯টা থেকে টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও শুরু হয় ৯টা ১০ মিনিটের পর। টিকিটের গায়ে মূল্য লেখা তিন টাকা। তবে নেওয়া হয় পাঁচ টাকা।

সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে সেবা দেওয়ার কথা এখানে। তবে সরেজমিনে সোমবার ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ৮টা ৫০ মিনিটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মূল ফটকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন কাঞ্চন রবিদাস। একই সময়ে বহির্বিভাগের সামনে ছিল রোগীর ভিড়। চিকিৎসকরা না এলেও দেখা যায় ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের। যদিও রবি ও বুধবার দুপুর ১টার পর দেখা করার অনুমতি আছে তাদের।

৯টা ২০ মিনিটে ১০৯ নম্বর কক্ষে আসেন ডা. শাহনাজ বেগম। সেখানে ৯টা ৫০ মিনিটে বসেন আরও দুই নারী চিকিৎসক। ১০৭ নম্বর কক্ষে দন্ত বিভাগের চিকিৎসক আসেন ৯টা ২৫ মিনিটে। তখন টিকিট হাতে ১১০ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রোগীরা। ৯টা ৩৮ মিনিটে আসেন ডা. মাহির আনজুম। সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ভেতরে যান। ২০৩ নম্বর কক্ষে ৯টা ৫০ মিনিটে, ১০২ নম্বর কক্ষে ৯টা ৫৫ মিনিটে রোগী দেখা শুরু হয়। ১০১ নম্বর কক্ষে ১০টা ৫ মিনিটে আসেন অর্থোপেডিক্স কনসালট্যান্ট খোরশেদ আলম শিবলু।

উপজেলার চাউলাইট গ্রামের নাদিরা বেগম হাসপাতালে আসেন সকাল ৭টার দিকে। সকাল ১০টা ৮ মিনিটের সময়ও চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে কষ্টের কথা জানান তিনি। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আসা কাকচরের তোবারক হোসেন বলেন, ১০টা বাজলেও রোগী দেখেন না চিকিৎসকরা।

১০৮ নম্বর কক্ষে ১০টা ১৬ মিনিটে আসেন দুই চিকিৎসক। ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে ১০৩ নম্বর কক্ষে বসেন কার্ডিওলজির কনসালট্যান্ট শাহাদাত হোসেন। ১০টা ৪৫ মিনিটে ১০৪ নম্বর কক্ষে আসেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) শফিকুল হক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১০৬ নম্বর কক্ষে আসেন চিকিৎসক মু. মনোয়ার সাদাত।

এদিন বহির্বিভাগে ১৪ জন চিকিৎসককে সেবা দিতে দেখা যায়, যাদের সবাই নির্ধারিত সময়ের পর আসেন। তবে দুপুর ১টা বাজার পরপরই হাসপাতাল ছাড়তে শুরু করেন তারা। এ বিষয়ে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) শফিকুল হক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে বেরিয়ে যান ১১০ নম্বর কক্ষের দুই চিকিৎসক। দুপুর ২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ১০২ নম্ব্বর কক্ষে মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট সোহেল রানাকে দেখা যায়। দুপুর ১টার পর বন্ধ হয় বহির্বিভাগের টিকিট দেওয়া। থেমে যায় আলট্রাসনোগ্রাম করাও। তবে এক্স-রে ও প্যাথলজি বিভাগ খোলা ছিল। সোমবার পাঁচটি এক্স-রে করা হয়েছে বলে জানান রেডিওগ্রাফার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাসপাতালে এক্স-রে ফিল্মের সংকট রয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহির্বিভাগের রোগীদের বাগিয়ে নিতে দেখা যায় লিপি আক্তারকে। হলিল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হয়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকেন তিনি। তার কাছে পাওয়া যায় রোগীর নামহীন বহির্বিভাগের দুটি টিকিট। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েক দালাল সটকে পড়তে থাকেন। এক নারী তাদের চেনাতে সাহায্য করেন। তার ভাষ্য, ৫০-৬০ জন নারী ডায়াগনস্টিক-ক্লিনিকে রোগী বাগিয়ে নিতে কাজ করে। রোগীদের নিয়ে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিকে যান মাজেদা খাতুন। তিনি দাবি করেন, বেশি রোগী নিতে পারেন না।

উপজেলার সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার প্রধান ভরসা ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে চিকিৎসকের ৩২টি পদের মধ্যে ২৭ জনই রয়েছেন। এখানকার অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এখন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী আসছেন। তবে দিনে এক হাজার ৫০০ পর্যন্ত রোগীও আসেন। এক্স-রে ফিল্মের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, রোগী থাকলে তারা দেখে যান। চিকিৎসকরা হাসপাতালেই ছিলেন।