- সারাদেশ
- মেয়াদ ফুরালেও কাজ হয়েছে আধা
মেয়াদ ফুরালেও কাজ হয়েছে আধা

কালভার্ট নির্মাণের জন্য খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে খুলনা নগরীর শেরেবাংলা সড়ক। আমতলা মোড়ের ছবি - সমকাল
কাজ এক মাস হয়, বন্ধ থাকে দুই মাস। গর্ত খুঁড়ে সড়ককে এবড়োখেবড়ো বানিয়ে নির্মাণ হচ্ছে কালভার্ট। সেই কাজেও নেই গতি। এতে ওই পথে থাকে নিত্য গাড়িজট। ঘটে দুর্ঘটনা। সড়ক, দুই পাশের নর্দমা ও বিভাজকের (ডিভাইডার) কাজ কবে যে বন্ধ করেছেন, তা ঠিকাদারও ভুলতে বসেছেন। মাঝপথে কাজ বন্ধ হওয়ায় বালু-পাথরের উঁচুনিচু সড়কে এলাকার মানুষকে চলতে হচ্ছে ঝক্কি নিয়ে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৭ এপ্রিল কাগজে-কলমে শেষ খুলনা নগরীর শেরেবাংলা সড়ক চার লেন প্রকল্পের মেয়াদ। মেয়াদ ফুরালেও সড়কের আধা কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে দানা বেঁধেছে অসন্তোষ।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পেরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আরজি জানিয়েছে সড়ক বিভাগ। সংস্থাটির দাবি, এরই মধ্যে ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, কাজে গতি আনার বিষয়ে সংস্থাটির নেই তেমন উদ্যোগ। বিষয়টি নিয়ে নাখোশ খুলনার নাগরিক নেতারাও। তবে সড়ক বিভাগ বলছে, বর্তমানে রড, সিমেন্টসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ায় ঠিকাদার কাজ করতে চাইছে না।
নগরীর বঙ্গবন্ধু চত্বর (ময়লাপোতা মোড়) থেকে গল্লামারী হয়ে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে কাজ করছে খুলনা সড়ক বিভাগ। সড়ক বিভাগের কাগজে-কলমে প্রকল্পের নাম 'খুলনা-চুুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশে চার লেনে উন্নীতকরণ'। সড়কটি শেরেবাংলা সড়ক নামেই নগরবাসীর কাছে পরিচিত। প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শুরু করতে ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সড়ক বিভাগ। গত ৭ এপ্রিল চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, জিরোপয়েন্ট থেকে গল্লামারী হয়ে আলকাতরা মিল পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের দুই ইঞ্চি কার্পেটিং করা হয়েছে। বাকি অংশে বালু ও পাথর মিশিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলায় বালু সরে গিয়ে পাথর উঁচু হয়ে আছে। এ কারণে প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে। নগরীর ময়লাপোতায় সোনাপোতা স্কুলের সামনে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নর্দমা নির্মাণ করেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নর্দমার জন্য মাটি খুঁড়ে রাখায় স্কুলে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিশুদের। প্রায় চার মাস আগে জিরোপয়েন্ট অংশে প্রায় ৫০ মিটার বিভাজক নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই কাজও বন্ধ চার মাস ধরে। নগরীর আমতলা মোড়ে কালভার্ট নির্মাণের জন্য সড়ক খুঁড়ে কাজ চলছে। এতে সড়কের অর্ধেকটা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন দেখা দিচ্ছে যানজট। সড়ক বিভাগের ২০১০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, শেরেবাংলা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১৪ হাজার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল করে। গত ১১ বছরে যানবাহনের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে জিরোপয়েন্ট থেকে গল্লামারী সড়ক সবাইকে ব্যবহার করতে হয়। সড়ক দিয়ে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পড়ছেন তারা।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, 'সড়ক বিভাগ রমজানের আগে কার্পেটিং শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিল। কথা রাখেনি তারা। এভাবে চলতে থাকলে সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যাবে না।'
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, 'কাজ বন্ধ নেই। তবে পাথর না পাওয়ায় কাজের গতি একটু কম।'
এ ব্যাপারে খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, 'শুরুতে বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরে সময় লেগেছে। মাঝে বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ ছিল। পাথরের দাম বাড়ার কারণে সড়কে কার্পেটিং বন্ধ রয়েছে।' তিনি বলেন, 'কাজের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
মন্তব্য করুন