ফরিদপুরের সালথায় গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ছয়টি দোকানসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘর। লুটপাট করা হ‌য়ে‌ছে ক‌য়েক‌টি বাড়িতে। 

এ সময় রবিউল শেখ, শফিকুল ইসলাম, লুকমান ফকির, ফজর আলী, বজলু মাতুব্বর, ফিরোজ মাতুব্বর, আহম্মদ মাতুব্বর ও জালাল শেখসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে গ্রাম্য দলপক্ষ নিয়ে খোয়াড় গ্রামের খবির শেখের সঙ্গে জালাল শেখ ও রবিউল শেখের কথা কাটাকাটি হয়। খবির শেখ সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরের অনুসারী আটঘর ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামের আমিনুল মাতুব্বরের সমর্থক। আর জালাল ও রবিউল শেখ আটঘর ইউনিয়‌নের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল হাসান খান সোহাগের অনুসারী খোয়াড় গ্রামের সামাদ মাতুব্বরের সমর্থক। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালান। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট। খবর পেয়ে সালথা থানার পুলিশ গিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আমিনুল মাতুব্বর বলেন, সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতুব্বর আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগকে বলে গোয়ালপাড়া, সেনহাটী, গোবিন্দপুর ও সিংহপ্রতাপ থেকে শতশত লোক এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমার দলের নিজাম শেখের তিনটি ও সত্তার মাতুব্বরের দুটি বসতঘর ভাঙচুর করে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সামাদ মাতুব্বর বলেন, গ্রাম্য দলপক্ষ নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে আমিনুল মাতুব্বর সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরকে খবর দিয়ে গট্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও থেকে লোকজন এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। উপজেলা চেয়ারম্যানের শ্বশুর সিংহপ্রতাপ গ্রামের ইমামুল হোসেন তারা মিয়াকে খবর দিয়েও অনেক লোক আনা হয়। আমার দলের মোহাম্মাদ ফকিরের তিনটি, কুদ্দুস মাতুব্বরের তিনটি, মো. রবিউল শেখের দুটি, মানিক মাতুব্বরের তিনটি, জালাল শেখে একটি ও শুকুর মশালচীর দুটি বসতঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করে তারা। এছাড়া আটঘর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর থেকে বকুল মাতুব্বর ও হাতেম মোল্যা এবং তাদের লোকজন গিয়ে আমার ও আমার ভাতিজা মো. আনিচ মাতুব্বরের বাড়িঘরে হামলা করে।

ফরিদপুরের সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সংঘর্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে ১৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। তবে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।

উল্লেখ্য, সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরের শ্বশুর ইমামুল হোসেন তারা মিয়া আটঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যা মামলার আসামি। মামলার সাক্ষী হওয়া নিয়ে আটঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল হাসান খান সোহাগের সঙ্গে তারা মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। ২০১৮ সালে ওয়াদুদের সমর্থকেরা সোহাগের বাড়িতে হামলা করলে জিয়া নামে একজন নিহত হন। সোহাগের সাক্ষীতে তারা মিয়া ১০ বছর জেল খেটে কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি এলাকায় আসার পর থেকে তারা ও সোহাগের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এখন মাঝেমধ্যেই দুই পক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষ হচ্ছে।