নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বকেয়া বেতনের জন্য দুই শিশুশিক্ষার্থীকে মাদরাসায় ৫ ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে। পরে স্বজন ও এলাকাবাসী খবর পেয়ে সন্ধ্যায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করে। আটকে রাখা শিক্ষার্থীরা হলো ওই মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. নাঈম (৭) ও ছাত্রী তার ছোট বোন জেসমিন।

খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মির্জা মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের থানায় আসতে বলেন। পরে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে থানায় বসে মীমাংসার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদমজী নতুনবাজার এলাকার দারুল আরকাম তাহফিজুল কোরআন মাদরাসায় ঘটনাটি ঘটে। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মির্জা মো. শহিদুল ইসলাম।

এদিকে এ রিপোর্ট লেখা (মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা) পর্যন্ত ওই দুই শিশুর বাবা জামাল হোসেন থানায় অভিযোগ করতে চাইলেও পুলিশ টালবাহনা করছে বলে জানিয়ে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি ও ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে আমার দুই সন্তানের ৬ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে। কিছু দিন যাবৎ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল টাকার জন্য মোবাইলফোনে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। 

পরবর্তীতে আমি মাদরাসায় গিয়ে প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে কিছু টাকা দিয়ে অবশিষ্ট টাকা ঈদের আগে পরিশোধ করব বলে আশ্বাস দেই। কিন্তু তাদের পাওনা টাকা না দেওয়ায় সোমবার দুপুর দেড়টায় আমার বড় মেয়ে আমার দুই ছেলে-মেয়েকে আনতে গেলে প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসান টাকা ছাড়া তাদেরকে যেতে দেওয়া হবে না বলে সাব জানিয়ে দেয়।

এদিকে তারা আমার দুই শিশুসন্তানকে মাদরাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে চলে যায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী আমাকে মোবাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, টাকার জন্য মাদ্রাসায় আমার ছেলে-মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমার সন্তানদের উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দেই।

পরে থানা থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মির্জা শহিদুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে এসআই মির্জা শহিদুল ইসলাম অভিযুক্তদের থানায় আসতে বলেন। পরে থানায় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং অনেক রাত হয়েছে বিধায় আমরা থানা থেকে বাসায় চলে আসি।

মঙ্গলবার দিনভর আমার অভিযোগ নিতে নানাভাবে টালবাহনা করছে পুলিশ। পরে রাতে অভিযোগ নেবে বলে জানান। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। যাতে আর কোনো বাবা-মা ও সন্তানদের এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়।

এসআই মির্জা শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি সোমবার থানায় দু’পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা থানায় এসে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানান। পরবর্তীতে থানায় বসে ওসি স্যারের নির্দেশে ভুক্তভোগীর বাবা ও অভিযুক্ত হুজুরদের ডেকে এনে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। যা হবার তা তো হয়ে গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য ওই প্রতিবেদককে বলেন পুলিশের কর্মকর্তা।

অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক জানান, বিষয়টি আমি সকালে জানতে পারি। শুনেছি দু’পক্ষের মাঝে মীমাংসা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কেউ এখনো অভিযোগ দিতে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে একাধিকবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানকে ফোন দিলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।