গেল দু’বছর করোনার কারণে ম্লান ছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। করোনার মহামারি কাটিয়ে এ বছর আবারও প্রাণ ফিরে এসেছে এ উৎসবের। তবে রমজানের কারণে উৎসবে ভাটা পড়েছে ফুলখাতে।  বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় বৈশাখের ছোঁয়া লাগেনি ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালির ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। তবে রমজানের আগ পর্যন্ত ভালো দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় লোকসানে পড়বে না  বলে মনে করছেন ফুলচাষীরা।

ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলা বর্ষবরণের উৎসবকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা মেটাতে গত একমাস ধরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন যশোরের গদখালির ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বাংলা বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে গত ১২ এপ্রিল ফুলের বাজার শুরু হয়েছে। ১৩ এপ্রিল ছিল সবচেয়ে বড় বাজার। এদিন ভোর থেকেই বাজারে গোলাপ, জারবেরা, গ্লা রজনীগন্ধা, ভুট্টা কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে গদখালি হাটে হাজির হন চাষিরা। কিন্তু রমজানের কারণে সংক্ষিপ্ত পরিসরে নববর্ষের অনুষ্ঠান হওয়াতে ফুলের চাহিদা না থাকায় বেচাকেনা সেভাবে জমে উঠেনি। দোকানগুলো ছিলো প্রায় পাইকারশূন্য। স্বাভাবিক সময়ে পহেলা বৈশাখে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হলেও এবছর কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি ফুলখাতের সংশ্রিষ্টরা। তবে তারা মনে করছেন, রমজানের পর বৈশাখের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন।

বুধবার বাজারে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে দেড় শ’থেকে দুই শ’ টাকা দরে। একেকটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে দুই থেকে আড়াই টাকায়। রজনীগন্ধা একেকটি বিক্রি হয়েছে দেড় থেকে দুই টাকায়। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। ফুল বাঁধার জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা আঁটি। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকা।
 
ইসমাঈল হোসেন নামে এক ফুল চাষী বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারের পহেলা বৈশাখে ফুল বেচাকেনার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম। কিন্তু রমজানের মধ্যে এই উৎসবটা পড়ায় উদযাপনে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। ফুলের বেচাকেনাও নেই। তার পরও সবাই যে খুব যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়। কারণ রমজানের আগের দিবসগুলোতে ভালো দামে এবার ফুল বিক্রি করেছে গদখালির ফুল চাষীরা।

সালাম হোসেন নামে আরেক ফুলচাষী বলেন, পহেলা বৈশাখের জন্য প্রস্তুতি ছিল, তবে বেচাকেনা নেই। তার পরেও বাজারে যে দাম পাচ্ছি, সেই দামেই ফুল বিক্রি করে দিচ্ছি। পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে ক্রেতা নেই। একে তো রোজা তার উপর অতিরিক্ত তাপমাত্রা তাই মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না, ফুল নিবে কে?

নজরুল ইসলাম নামে ফুল চাষী বলেন, করোনা, আম্পান ঝড়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু চলতি মৌসুমে এবার ফুলের উৎপাদনের সাথে ফুলের দামও পেয়েছি। ফলে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছিল ,তার কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছি।

ইকবাল হোসেন নামে এক ফুল ব্যবসায়ী বলেন, এ বৈশাখে বেচা কেনা একেবারেই কম। আগে পহেলা বৈশাখের আগে যশোরের বাইরের পাইকাররা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রীম বুকিং দিয়ে যেতেন। এবার তেমন চাহিদা নেই।
 
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি’র সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সাধারণত রমজান মাসে ফুলের ব্যবহার কম থাকে। তারপর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখান থেকে ফুল যাচ্ছে। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় ফুলের দামও কম। তবে রমজানের আগ পর্যন্ত ভালো দামে ফুল বেচাবিক্রি হওয়ায় ফুলচাষীরা লোকসানে পড়বে না বলে মনে করেন ফুলচাষীদের এই নেতা।
 
যশোরের আট উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে চলতি মৌসুমে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনার কারণে ফুলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। করোনার পরে চলতি বছরে বিভিন্ন দিবসে ভালো দামে ফুল বিক্রি করে এই অঞ্চলের ফুলচাষীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।