- সারাদেশ
- শাশুড়ি ও তিন শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড
শাশুড়ি ও তিন শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড

গোপালগঞ্জে শাশুড়িসহ চারজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় জামাতা আজাদ মোল্যাকে (৪৭) মৃত্যুদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দীন এ রায় দেয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজাদ মোল্যা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের বেলায়েত মোল্যার ছেলে।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আজাদ মোল্যা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বরাত দিয়ে ওই আদালতের বেঞ্জ সহকারী মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, আজাদ মোল্যা প্রায় ২৭ বছর আগে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ডুমদিয়া গ্রামের শরিফা বেগমকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির চার ছেলে সন্তান রয়েছে। আজাদ মোল্যা তার স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক বলে সন্দেহ করতেন। এ নিয়ে স্বামী আজাদ স্ত্রী শরিফাকে প্রায়ই মারপিট ও অত্যাচার-নির্যাতন করত। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে শরিফা মাঝে মধ্যেই সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতেন।
২০১৪ সালের ১৫ মে আজাদ শশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে জোর করে তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। ওই দিন শরিফা তার স্বামীর সাথে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে দু’ছেলেকে জোর করে বড়িতে নিয়ে আসেন। এ ঘটনার ২ দিন পর ১৭ মে আজাদ মোল্যার শাশুড়ি ফুড়িয়া বেগম (৭০), বড় শ্যালিকা আনোয়ারার ছেলে আমিনুর (১৪) অপর শ্যালিকা রানির জমজ ছেলে-মেয়ে তামিম (৫) ও তনিমাসহ (৫) অন্যান্যরা একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। ওই দিন রাত ১২ টার দিকে আজাদ তার সহযোগিদের নিয়ে ওই ঘরে আগুন দেয়। এ সময় আগুনে পুড়ে ঘরের মধ্যেই ফুড়িয়া বেগম, আমিনুর ও তামিম মারা যায়। দগ্ধ তনিমাকে গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির ২ ঘন্টার মধ্যে সে মাো যায়। আগুনে ঘরটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় । স্বাক্ষীরা আজাদ মোল্যা ও তার সহযোগিদের নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
বেঞ্জ সহকারী মাহবুবুর রহমান আরো জানান, এ ঘটনায় ফুড়িয়া বেগমের ছেলে সাইফুল গাজী ২০১৪ সালের ১৮ মে বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত আজাদ মোল্যাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি ( তদন্ত) সেলিম রেজা ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট আজাদ মোল্যার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গ্রেফতারের পর থেকে আজাদ জেল হাজতে ছিলেন।
স্বাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে বিজ্ঞ বিচারক আজাদ মোল্যাকে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ হাজার টাক অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এপিপি শহিদুজনজামান পিটু, ফজলুল হক খান খোকন, সামসুন্নাহার ও আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাড. মো. ফারহান মোল্লা।
মামলার বাদী সাইফুল গাজী বলেছেন, আদালতের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এখন দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
এপিপি শহিদুজনজামান পিটু বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবার সঠিক বিচার পেয়েছে।
আসামি পক্ষের এ্যাড. মো.ফারহান মোল্লা জানিয়েছে, এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
মন্তব্য করুন