তাপদাহে হাঁসফাঁস করছে রাজশাহীর মানুষ। ভৌগোলিকভাবে উষ্ণ এই রাজশাহীতে দীর্ঘ দিন ধরে নেই বৃষ্টিপাত। বাতাসেও যেন আগুনের ছটা ছড়িয়ে পড়েছে। ঠা-ঠা রোদে পুড়ছে পদ্মাপাড়ের শহরটি। গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। তাপদাহের কারণে মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না। গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, দ্রুত বৃষ্টিপাত না হলে গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, রাজশাহী এমনিতেই উষ্ণতম জেলা। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবার এখানে তীব্র গরম হয়। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত না থাকায় তাপমাত্রা বেশি। বৃষ্টি ব্যতীত এই মুহূর্তে রাজশাহী তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া এমন শুষ্ক থাকলে তাপদাহ আরও বাড়বে।

তীব্র তাপদাহ থেকে বাচঁতে চোখেমুখে ঠান্ডা পানি দিচ্ছে কিশোর। ছবিটি তুলেছেন শরিফুল ইসলাম তোতা

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, চলতি এপ্রিল মাসে এই পর্যন্ত মাত্র শূন্য দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাও সেটি ৩ এপ্রিল। এর আগে সবশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ৩০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মার্চে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে রাজশাহী অঞ্চলের তাপমাত্রা দিনদিন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। মাটি ফেঁটে খা খা করছে, রাস্তাঘাটে যেন আগুনের ছটা বের হচ্ছে। সর্বত্রই যেন বৃষ্টির জন্য হাহাকার। খেটেখাওয়া মানুষরা পড়েছেন দুর্ভোগে।

রোববার রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরমের তীব্রতা থেকে একটি স্বস্তি পেতে কেউ কেউ গাছতলায় বসে সময় কাটাচ্ছেন। খেটেখাওয়া মানুষদের বেশি ভোগান্তিতে সময় কাটাতে দেখা যায়। নগরীর পদ্মারপাড়ের গাছতলায় খেটেখাওয়া, ভারী কাজের অনেক শ্রমিককে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে কয়েকদিনের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটি এই মৌসুম তো বটেই ২০১৪ সালের (৪২ দশমিক ৬) পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

রাজশাহীতে একটু প্রশান্তির জন্য পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোসলে ব্যস্ত শিশু-কিশোররা। ছবিটি তুলেছেন শরিফুল ইসলাম তোতা

রোববার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। এর আগে ১৪ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ১৩ এপ্রিল ৩৭, ১২ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ২, ১১ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ১, ১০ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে মৃদু তাপদাহ, ৩৮ থেকে ৪০ পর্যন্ত মাঝারি তাপদাহ, ৪০ থেকে ৪২ পর্যন্ত তীব্র তাপদাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা উঠলে সেটিকে অতি তীব্র তাপদাহ বলা হয়। রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখি ঝড় না হলে তাপমাত্রা তীব্র থেকে অতি তীব্রও হতে পারে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে তীব্র তাপদাহ দেখা গেছে একদিন। এপ্রিল মাসে মাঝারি তাপদাহও প্রায়দিনই দেখা যাচ্ছে। এই তাপদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত রাজশাহী জেলায় গত বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালে ৩৯ দশমিক ২, ২০১৯ ও ২০১৮ সালে ৪০ ডিগ্রি, ২০১৭ সালে ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ২০১৬ সালে ৪১ দশমিক ২ এবং ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী জেলার ইতিহাসে ১৯৭২ সালে সর্বোচ্চ ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।