ঈদ সামনে রেখে অপতৎপরতা বেড়েছে অপরাধী চক্রের। নতুন কৌশল নিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে সক্রিয় হয়েছে যাত্রীবেশী 'বমি পার্টি'। এই চক্রের সদস্যরা বাসে যাত্রীদের শরীরে 'বমি করে' তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়। চলতি মাসে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কে এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে। চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে ঈদের কেনাকাটায় প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে। উপজেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও ঈদের জন্য মালপত্র কিনতে ময়মনসিংহ শহর বা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন। মালপত্র কিনতে যাওয়া এই ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে বমি পার্টির সদস্যরা। শম্ভুগঞ্জ পাটগুদাম সেতু এলাকা থেকে নান্দাইল পর্যন্ত স্থান বেছে নিচ্ছে অপতৎপরতার জন্য।
গত ১০ এপ্রিল দুপুরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের মাইজবাগ বাজার থেকে দোকানের জন্য মালপত্র কিনতে যাওয়ার জন্য ময়মনসিংহগামী এমকে সুপার বাসে ওঠেন সাব্বির আহমেদ। তিনি মাইজবাগ বাজারের টপ ফাইভ শপিং সেন্টারের মালিক। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাসে ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে ঈশ্বরগঞ্জ বাসস্টেশন পার হতেই এক যাত্রী সাব্বিরের শরীরে বমি করে দেন। একজন বমি করে বাস থেকে নেমে যেতে শুরু করেন। চক্রের আরও তিন সদস্য হুলস্থুল কাণ্ড শুরু করেন। সাব্বির শরীর পরিস্কার করতে বাস থেকে নামার পর দেখেন তার পকেটে টাকার বান্ডেল নেই। চক্রের সদস্যরাও নেই।

ওই অবস্থায় সাব্বির বাসচালক ও চালকের সহকারীকে চাপ সৃষ্টি করেন, চক্রের সদস্যদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ রয়েছে- এমন অভিযোগ করেন। চাপের কারণে ১২ এপ্রিল নগরীর পাটগুদাম সেতু এলাকায় চক্রের সদস্যরা একই বসে পুনরায় অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলে তাদের ধরে মাইজবাগ বাজারে নেওয়া হয়। সেখানে চক্রের তিন সদস্যকে স্থানীয় লোকজন আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চক্রের সদস্যরা ৩০ হাজার টাকা ফেরতও দিয়েছে বলে সাব্বির সমকালকে জানিয়েছেন।
চক্রের আটক তিন সদস্য হলো- নগরীর বলাশপুরের সাইফুল ইসলাম, বকশীগঞ্জের মো. জামিরুল ও মুক্তাগাছার মো. আল আমিন। এই তিনজনকে আটক করা গেলেও বাকি আরও তিনজন পালিয়ে যায়।
ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞান পার্টি ও অন্যন্য প্রতারক চক্রের চৎপরতা প্রতিবছর বাড়ে। চেতনানাশক মিশিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়া ঠেকাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গত কয়েক দিন ধরে নগরীর বাসস্টেশন, সিএনজি স্টেশনে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ।
জনউদ্যোগ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশি তৎপরতার কারণে অপরাধী চক্র অনেক সময় কৌশল পাল্টে অপরাধ করে। পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাসচালক-হেলপারদের এ ধরনের ঘটনায় যোগসাজশ থাকতে পারে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদের মিয়া বলেন, চক্রটির সদস্যদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে টার্মিনাল এলাকাগুলোতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি।