- সারাদেশ
- ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্যে
ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্যে

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। নতুন কমিটিতে কারা আসছেন- এ নিয়ে চলেছে নানা সমীকরণ। এমন সময় দলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করছে। নিজ দলের নেতাদের নিয়ে মন্তব্য করায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে চলছে সমালোচনা।
২০১৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি হয়। সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পর সভাপতির দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় জেলা আওয়ামী লীগের। ইতোমধ্যে ত্রিবার্ষিক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অন্যদিকে উপজেলাগুলোতে ২০০২ সালের দিকে কাউন্সিল ও কমিটি গঠন হয়। এর পর ধীরে ধীরে সাংগঠনকি কাঠামো দুর্বল হতে থাকে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী যারা তৃণমূলে সদস্য ছিলেন, প্রতি তিন বছর পরপর তাদের সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। সেটা ২০০২ সালের পর আর করা হয়নি। ওয়ার্ডগুলোতে ২০ বছরে ২৫ শতাংশ লোক মারা গেছে, ২৫ শতাংশ লোক বৃদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়নি। নতুন যারা শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ করে যারা আওয়ামী লীগ করছেন তাদের সদস্যপদও গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগ অরক্ষিত রয়ে যাচ্ছে। দলের জন্য নিবেদিত হলেও সদস্য হতে না পেরে অনেকে বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন, যা বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে আসে। প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত হতে হয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে। দলের পদ না থাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রণও করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এর মধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় দলের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু হয়েছে। গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদক দু'জনই মারা গেছেন। ঈশ্বরগঞ্জে মারা গেছেন সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত। নান্দাইলে কমিটি নিয়ে রয়েছে বিশৃঙ্খলা। অন্য উপজেলাগুলোতেও দলে বিশৃঙ্খলা রয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল বলেন, তাদের উপজেলায় ২০০৩ সালে কমিটি হয়। ইতোমধ্যে সভাপতি-সম্পাদক মারা গেছেন।
তবে ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ ধোবাউড়া, তারাকান্দা, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া ও গফরগাঁও উপজেলার সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে। ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণার পরই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। কমিটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে পদবঞ্চিত নেতার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ভাঙচুর চালান। কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ।
চলমান আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটি ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে একটি গণমাধ্যমে কথা বলায় গত মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠক করা হয়। সিটি করপোরেশনের হলরুমে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সভায় দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীমকে গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারায় তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবু সাঈদ দীন ইসলাম ফখরুল চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
কাজী আজাদ জাহান শামীম সমকালকে বলেন, জেলায় যে সম্মেলন হচ্ছে তা সঠিক ধারায় হচ্ছে না। যে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম করেছে। এখানে পদ-বাণিজ্য হয়েছে। দলের নেতাদের প্রতি এসব মন্তব্যে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ চলছে তিন গ্রুপে। এক গ্রুপে মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, আরেক গ্রুপে সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম এবং অন্য গ্রুপে তাদের মতো সাধারণ নেতারা। তৃণমূল অরক্ষিত রেখে যদি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাইনবোর্ড দেওয়া হয়, সেটা হয় খোসা আওয়ামী লীগ। তিনি আরও বলেন, আমি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাব এবং আবার ফিরে আসব।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করা হলেও নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলেননি। তার পর অনেকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন