
চট্টগ্রামে ক্রেতার আনাগোনায় মার্কেটগুলো গভীর রাতেও থাকছে মুখর। ছবিটি নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে তোলা -মো. রাশেদ
তখন ঘঁড়ির কাঁটায় রাত প্রায় ২টা। রোজা রাখার জন্য কিছু সময় পর সেহরি খেতে হবে। তার আগেই গোছাতে হবে এলোমেলো কাপড়। বন্ধ করতে হবে দোকান। এরপর বাসায় যেতে হবে। কিন্তু তখনও মার্কেটে ক্রেতার ভিড়। এক পর্যায়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ক্রেতাদের মার্কেট ছাড়ার অনুরোধ। তারপর দোকানদারদের অনুরোধ, এমনকি জোরাজুরি। আর এভাবে মার্কেট থেকে ক্রেতাদের বের করার দৃশ্যটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় সংলগ্ন সানমার ওশান সিটির। শুধু সানমারই নয়, এখন নগরীর ছোট-বড় প্রায় সব মার্কেটেরই অভিন্ন অবস্থা। উৎসবের আমেজে ঈদের কেনাকাটায় মশগুল ক্রেতারা। ফলে কয়েক দিন থেকে চট্টগ্রাম যেন নির্ঘুম নগরী।
কয়েকটি মার্কেটে সরেজমিনে জানা গেল, দিনের বেলায় মার্কেটগুলো থাকছে চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা ও নগরীর আশপাশের এলাকার ক্রেতার দখলে। আর রাতে নগরবাসীর। নগরীর ক্রেতাদের বেশিরভাগই ইফতার ও তারাবি নামাজের পর কেনাকাটা করতে বের হচ্ছেন। রাতভর চলে এই কেনাকাটা। প্রাণঘাতী করোনা পর পর দুই বছর ঈদের আনন্দ মাটি করে দিয়েছিল। করোনার ভয়াবহতা কমে আসায় এবার ঈদ সামনে রেখে মার্কেটগুলো ঘিরে নগরীতে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেতাদের সরগরম আনাগোনায় মুখে হাসি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের।
ক্রেতাদের নজর কাড়তে প্রথম রোজা থেকেই নগরীর অভিজাত মাকেট বালি আর্কেড, মিমি সুপার মার্কেট, আমিন সেন্টার, বিপণিবিতান, সানমার শপিং সেন্টার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকী প্লাজা, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট, ইউনেস্কো সেন্টার, ফিনলে স্কয়ার, সেন্ট্রাল প্লাজাসহ বিভিন্ন মার্কেট আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি কেনাকাটার ওপর দেওয়া হচ্ছে কুপন। কুপনে থাকছে আকর্ষণীয় নানা উপহার।
শবেবরাতের পর থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু করেন ক্রেতারা। ফলে মার্কেটগুলোতে তখন থেকে বাড়তে থাকে ব্যস্ততা। কয়েক দিন ধরে এসব মার্কেটে সেহরির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বেচাকেনার ধুম লেগেই আছে।
নগরীর লালখান বাজারের আমিন সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহিদ আলী সমকালকে বলেন, সকাল ১০টায় মার্কেট খোলা হচ্ছে। বেচাকেনার জন্য দোকান প্রস্তুত করতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগছে। দুপুর ১২টা থেকে পুরোদমে ক্রেতা আসতে শুরু করেন। সেহরির আগ পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। ইফতারের পর মার্কেটে ক্রেতার ঢল নামে। ক্রেতার এই স্রোত ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
তরুণীদের প্রথম পছন্দ শারারা-গারারা কয়েকটি মাকেটে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে কয়েক দিন ধরে উপচে পড়া ভিড়। শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, জুতা, স্যান্ডেল, গহনাসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানগুলোতে উৎসবের আমেজেই চলছে বেচাকেনা। ক্রেতার নজর কাড়তে 'ডলের' গায়ে পরিয়ে রাখা হয়েছে হাল ফ্যাশনের সব কাপড়-চোপড়। এর মধ্যে এবার ঈদের কাপড়ে পাকিস্তানের 'শারারা' ও 'গারারা'। কুর্তি লেহেঙ্গা, ভারতীয় 'পেপলন', বিভিন্ন ধরনের পার্টি ফ্রক ও বার্বি গাউনসহ আরও কয়েক ধরনের থ্রি-পিস তরুণীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।
নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে সানমার ওশান সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা কলেজছাত্রী সায়মা সুলতানা বলেন, এবার বেশ গরম পড়ছে। তার পরও ঈদ বলে কথা। তাই ঈদের দিনের জন্য একটু ভারী পোশাক এবং পরে পরার জন্য সুতি টাইপের পোশাক নিয়েছি।
সানমার ওশান সিটির 'সাজ' নামে একটি দোকানের সেলসম্যান আকমল হোসেন জানালেন, এবারের ঈদে পাকিস্তানের 'গারারা' ও 'শারারা' নামে থ্রি-পিস ধরনের পোশাক তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া ভারতের কিছু পার্টি ফ্রক বেশ চলছে। একই মার্কেটের ভেলেনডিনা শপে দেখা গেছে সুতি পোশাকের বিপুল সমাহার। এই দোকানের সেলসম্যান হৃদয় হাসান জানান, তারা সারা বছরই সুতির থ্রি-পিস বিক্রি করেন। এবার গরমে ঈদ হওয়ায় সুতির কাপড়ে নানা কারুকাজের পোশাক তোলা হয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
মুখর রাজপথ, ব্যস্ত পুলিশ খুশির আমেজে কেনাকাটায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য রাতভর ব্যস্ত থাকছে পুলিশ। ঈদের মার্কেট ও ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মাঝে মধ্যে সন্দেহভাজনদের তল্লাশিও করছেন পুলিশ সদস্যরা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশা, হিউম্যান হলার ও মিনিবাস ভোররাত পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। তবে ভাড়া কিছুটা বাড়তি রাখা হচ্ছে।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন বলেন, গভীর রাতেও মানুষ কেনাকাটা করতে মার্কেটে যাওয়া-আসা করছেন। এতে ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন সেজন্য নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অনেক স্থানে চেকপোস্ট বাসিয়ে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন