চার বছর বয়সী নাজমার মতো অনেক শিশুই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে যায়। জামা-জুতা কিনে মনের আনন্দে ঘরে ফেরে। কিন্তু নাজমার সেই ভাগ্য হয়নি। তার মা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে বন্দি থাকায় প্রায় দুই বছর ধরে মায়ের সঙ্গে চার দেয়ালের মধ্যেই জীবন কাটছে শিশুটির। তাই ঈদের দিনও পুরোনো জামাই তার সম্বল। মায়ের 'অপরাধে' তার জীবনও এখন বিবর্ণ।

নাজমার মতোই আনন্দহীন ঈদ কাটবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মায়ের সঙ্গে বন্দি ৬৬ শিশুর। এর মধ্যে ৩০ জন ছেলে ও ৩৬ জন মেয়ে শিশু। এই বয়সে তাদের ঘরে-মাঠে খেলাধুলা করা ও আনন্দে মেতে ওঠার কথা। তবে সে সুযোগ তারা পাচ্ছে না। তাদের কাছে ঈদ কোনো খুশির বার্তা নিয়ে আসে না।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী শিশুদের মায়েদের সঙ্গে রাখা হয়। ছয় বছরের কম বয়সী শিশুরা এ সুযোগ পায়। বয়স এর বেশি হলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কারাগারে থাকা শিশুদের আলাদা যত্নের ব্যবস্থা রয়েছে। মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুসহ কারাগারে সবাইকে ঈদে উন্নত মানের বিশেষ খাবার দেওয়া হবে। তবে তাদের জন্য ঈদের নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য সমাজসেবা থেকে নতুন পোশাক দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, কারাগারে শিশুদের বিচরণের জন্য অনুকূল পরিবেশ নেই। সেখানে তাদের মানবিক বিকাশ একদমই ঘটছে না। ঈদে নতুন জামা না পাওয়ার ঘটনা তাদের মনে দাগ কাটবে। তাদের জন্য মানবিক পরিবেশ খুবই জরুরি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন ছয় হাজার ৭৯৩ জন বন্দি রয়েছেন। তার মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৪৭০ এবং নারী বন্দি ৩২৭ জন। গত বুধবার আদালতে মাদক মামলার আসামি নাসিফা আক্তার জানান, ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ার পর তার দেড় বছরের শিশুকে নিয়ে কারাগারে ঢুকেছেন। তারপর দুই বছরেও জামিন পাননি। কারাগারে তার সঙ্গেই শিশুটি বন্দি রয়েছেন।
জানা গেছে, কারাগারে মহিলা বন্দি ভবনের নিচতলায় শিশুদের একটি বড় রুম দেওয়া হয়েছে খেলাধুলা করার জন্য। ভবনের বাইরে মায়ের সঙ্গে শিশুরা হাঁটতে পারে, পড়তে পারে, খেলতেও পারে। খেলাধুলার অল্প কিছু সরঞ্জাম রয়েছে। দিবাযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুরা এ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। শিশুদের বই, আদর্শলিপি, খাতা, কলম, পেনসিল, চক, ছবি আঁকার বোর্ড, বল, রং পেন্সিল ও নানা রকম খেলনা দেওয়া হয়।