- সারাদেশ
- শিমুলিয়ায় বাড়িফেরা মানুষের ঢল
শিমুলিয়ায় বাড়িফেরা মানুষের ঢল

ছবি: সমকাল
রোজা শেষের দিকে আর সন্নিকটে ঈদুল ফিতর। তাই স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ জেলায় বসবাসরত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ শুক্রবার থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হয়ে যাচ্ছেন। ফলে দক্ষিণবঙ্গগামী ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল দেখা গেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায়।
শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রো ও মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় এসে জড়ো হতে থাকেন ঘরমুখো যাত্রীরা। তাই গত কয়েকদিনের চেয়ে শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপও বেড়েছে বহুগুণ।
এদিকে ফেরি স্বল্পতা ও ফেরিতে গণপরিবহন পারাপার বন্ধ থাকায় কারণে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। পল্টুনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকছেন হাজারও মানুষ। যখনই কোনো ফেরি আসছে, তখনই হুমড়ি খেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ফেরিতে উঠতে। গাদাগাদি করে তারা ফেরিতে দাঁড়িয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। প্রতিটি ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার কারণে বিঘ্নিত হয়েছে গাড়ি পারপার। ফলে প্রতিনিয়ত দক্ষিণবঙ্গমুখী গাড়ির লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিমুলিয়াঘাট থেকে ছোট ছোট ছোট যানবাহনের লাইন দুই কিলোমিটার দূরে পদ্মাসেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দুপুর ১২টার পর থেকে ঘাট এলাকায় ৭ শতাধিক ছোট বড় যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে যাত্রীর চাপ কমে আসলেও ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা ব্যাক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বিকেল পর্যন্ত গড়ায়। এ নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ১০টি ফেরি সচল রয়েছে বলে জানিয়েছে শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ৮৫টি লঞ্চ ও ১৫২টি স্পিডবোটসহ ৮টি ট্রলার রয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদ ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্নে নৌরুট পারাপার নিশ্চিত করতে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশ বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে দায়িত্ব পালন করছেন।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সেহরির সময় রাজধানী থেকে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে আসতে শুরু করেন দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ। স্পিডবোট ও লঞ্চঘাট যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও বাড়ি ফিরতে পেরে আনন্দিত যাত্রীরা। অপরদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় এই পর্যন্ত তিনটি স্পিডবোট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি তিনদিনের জন্য ও অন্য দুটি একদিনের জন্য চলাচল স্থগিত করা হয়।
ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা এক ব্যাক্তিগত গাড়ির মালিক বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার জন্য সকাল ৫টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি। সকাল ৬টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় এসে পৌছালেও যাত্রীদের চাপে ফেরিতে গাড়ি ওঠানো সম্ভব হয়নি। রোজা রেখে এখানে রোদের মধ্যে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।’
বিআইডব্লিউটিসির একাধিক সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার ঘরমুখো যাত্রী, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি স্কুটারসহ বিভিন্ন যানবাহনে শিমুলিয়া ঘাট হয়ে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই যাত্রীরা ফেরিতে পারাপার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন সমকালকে জানান, লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপারে চাপ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে প্রচণ্ড যাত্রী চাপ রয়েছে। ফেরির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা না করে মানুষ লঞ্চ-স্পিডবোটে যাতায়াত করছেন। ভোর থেকে ১৫২টি স্পিডবোট ও ৮৫টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ঈদকে সামনে রেখে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে গত কয়েকদিনের তুলনায় কয়েকগুণ। এই নৌরুটে ১০টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন