- সারাদেশ
- কোথাও দেবেছে মাটি কোথাও নেমেছে ধস
কোথাও দেবেছে মাটি কোথাও নেমেছে ধস
কোথাও নেমেছে ধস, কোথাও দেবে গেছে মাটি। নেই রক্ষণাবেক্ষণ, নির্মাণের পর আর হয়নি সংস্কার। এক রকম ধুঁকছে কীর্তনখোলার কোলঘেঁষা বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধ। বাঁধটির দায়িত্বে থাকা বরিশাল সিটি করপোরেশনেরও নেই তেমন নজর। পুরো শহর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রমও শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এতে ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধসংলগ্ন এলাকাসহ পুরো নগর রয়েছে ঝুঁঁকিতে। এর মধ্যেই উপকূল কাঁপাতে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'আসানি'। এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে নগরের পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে সাগরদী খালের মুখসংলগ্ন এলাকা থেকে চরকাউয়া খেয়াঘাট পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকায় বাঁধ ও বাকি টাকা দিয়ে বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণের খরচ ধরা হয়। নদী দখলের অভিযোগ ওঠায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় হাইকোর্টে একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ শেষ পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। মামলায় বলা হয়, ওই কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বধ্যভূমি এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট ভরাট করে নগর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বধ্যভূমি এলাকার সাগরদী খালের সামনে থেকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধের মধ্যেই এই নদী দখলের অভিযোগ ওঠে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় নগরের সাগরদী খালের মুখের ওপর দিয়ে ছোট ব্রিজ ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচ পর্যন্ত বাঁধ ও সড়ক নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে পরে যতটুকু বাঁধ নির্মাণ হয়েছিল, তার ওপরই সড়ক নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যারা যখন ক্ষমতায় আসে তারা তখন হয়ে ওঠে দখলবাজ। নদী দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে এক শ্রেণির প্রভাবশালী। তারা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের বদলে ফেলে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। এ কারণে কীর্তনখোলা নদীর অনেক জায়গা এরই মধ্যে চলে গেছে তাদের দখলে। দখলদারিত্বের কারণে ভাঙছে নদী। অনেক স্থানে কীর্তনখোলা হয়ে গেছে সরু।
তারা জানান, সিটি করপোরেশনের আওতায় নির্মিত এই আংশিক বাঁধ নির্মাণের পর নগরবাসীর কাছে এটা একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। কীর্তনখোলা নদীর তীরের এই বাঁধে প্রতিদিন বিকেলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
কীর্তনখোলা নদী তীরে ঘুরতে আসা নাহিদ হোসেন বলেন, 'সময় পেলেই এখানে ঘুরতে আসি। তবে বাঁধটির সঠিক পরিচর্যা না থাকায় অনেক জায়গায় ধস দেখা দিয়েছে। এতে যে কোনো দুর্যোগে পুরো নগর মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। তাই দ্রুত পুরো নগর ঘিরে বাঁধ নির্মাণ এবং এই বাঁধের সংস্কার করা দরকার।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, যে উদ্দেশ্যে এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটাই বাস্তবায়ন হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা আর দখলদারিত্বের কারণে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। নদীর তীরে প্রায় ৫ হাজার দখলবাজ রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না। ফলে নদী সংকুচিত ও ভরাট হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের বরিশাল সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, একসময় বরিশাল নগরে ২৩টি মূল খাল আর ২৫টি শাখা খাল ছিল। এখন মাত্র ৭ থেকে ৮টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। নদীর সঙ্গে এসব খালের উৎসমুখ প্রবহমান না থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যে পানি নগরে ঢোকে তা আর বের হতে পারে না। এ জন্য শহর রক্ষা বাঁধের সঙ্গে এসব খালেরও সংস্কার প্রয়োজন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুখ হোসেন বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের ধসের জায়গাগুলোর ব্যাপারে প্রকৌশল বিভাগকে পরিদর্শনের জন্য বলা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।
মন্তব্য করুন