স্নাতকোত্তর উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের  ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত তিন শিক্ষার্থী। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের এক বছর পার হলেও ফলাফল পাননি বলে জানিয়েছেন তারা। বিভিন্ন সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সাথে যোগ দেয়ার কারণে তাদের ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন: আতিদুল ইসলাম, আজবীয়া খান এশা এবং মিতু রহমান। তারা সবাই খুবির বাংলা ডিসিপ্লিনের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর পোগ্রামের শিক্ষার্থী। তারা দাবি করেন, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের স্নাতকোত্তর ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফল আশানুরূপ না হওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি তারা উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও তারা পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল পাননি।

ফলাফল প্রকাশের প্রায় দেড় বছর পরেও স্নাতকোত্তরের উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ না করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হতাশা ব্যক্ত করেন বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী খান আতিদুল ইসলাম লিখেছেন,' স্নাতকোত্তরের কিছু কোর্সে প্রত্যাশিত ফলাফল না আসায় আমরা তিন বন্ধু গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলাম। খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল যেখানে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চলে আসে সেখানে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও অজ্ঞাত ও ভৌতিক কারণে আমাদের তিনজনের ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। আমরা বহুবার ডিসিপ্লিন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গিয়েছি। তারা বার বার আশ্বাস দিয়েও ফলাফল প্রকাশ করেনি।'

ভুক্তভোগী অপর শিক্ষার্থী আজবীয়া খান এশা বলেন, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমার স্নাতকোত্তর ফলাফল প্রকাশিত হয়। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় আমি থিসিস সহ ৪টা বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করি। কিন্তু আবেদনের প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ হয়নি। দেড় বছর ফলাফল আটকে রাখাতে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। চাকরি পাওয়ার বয়স থেকে ইতোমধ্যে দেড় বছর চলে গিয়েছে। আমরা সকলেই এখন মানসিক এবং আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, আমার মতই আমার সহপাঠী খান আতিদুল ইসলাম থিসিসসহ ৩ টা বিষয়ে এবং মিতু রহমান থিসিসসহ ২ টা বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেও এখন পর্যন্ত ফলাফল পায়নি।

এদিকে খুবিতে বিভিন্ন সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সাথে যোগ দেয়ার কারণে ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ওই তিন শিক্ষার্থী।

তারা দাবি করেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবিতে তারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন একারণে এর প্রভাব পড়েছে তাদের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের ক্ষেত্রে। তারা বলেন, আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিসহ ৩ শিক্ষকের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আমরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম একারণে আমাদেরকে ডিসিপ্লিনের কতিপয় কিছু শিক্ষকের রোষানলে পড়তে হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খান আতিদুল ইসলাম বলেন, আমি দ্রুত ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথে এই দেড় বছরের মানসিক হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হয়েছি। এর জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) শেখ শারাফাত আলী বলেন, তারা (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আবেদন করেছেন। আমরা সেই আবেদন অনুযায়ী উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জন্য পাঠিয়েছিলাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ হয়ে আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। পুনঃনিরীক্ষণ শেষে আমরা উত্তরপত্র ডিসিপ্লিনে পাঠিয়েছি।

এ বিষয়ে বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রুবেল আনসার বলেন, পুনঃ নিরীক্ষণের একটি উত্তরপত্রের নম্বর না আসার কারণে ফলাফল তৈরি করা যায়নি। ওই খাতাটি মূল্যায়ন হয়ে আসলেই যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আশা করছি এই মাসের মধ্যেই ফলাফল দেওয়া সম্ভব হবে।

বার বার আশ্বাস দিয়েও ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব করার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি পুরোপুরি সত্য নয়।