রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ফসলি জমিতে সেচের পানি না পাওয়ায় দুই সাঁওতাল কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কৃষকদের ধানের জমি ফেটে চৌচির হলেও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন পানি দেননি বলে বলা হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের অভিনাথ ও তার চাচাতো ভাই রবি ফসলি জমিতে পানি না পেয়ে গত ২৩ মার্চ বিষপান করেন। অভিনাথ ওই দিনই এবং রবি এক দিন পরে মারা যান। দেশজুড়ে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে বিএমডিএর গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার দুটি মামলা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী থানার এসআই মাহাফুজুর রহমান জানান, গত মাসের শেষের দিকে অভিনাথের মৃত্যুর ঘটনায় মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। চলতি মাসের শুরুতে রবির মামলাও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিএমডিএর গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত নিজের পছন্দের লোকদের আগে পানি দিতেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চাষিদের পানির জন্য ঘোরাতেন। ধানের জমি ফেটে চৌচির হলেও সাঁওতাল ওই দুই কৃষককে পানি দেননি তিনি। এ কারণেই অভিনাথ মারান্ডি ও রবি মারান্ডি বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহাফুজুর রহমান জানান, তদন্তে যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক আবদুর রফিক জানান, কয়েক দিনের ব্যবধানে গোদাগাড়ী থানা থেকে অভিযোগপত্র দুটি প্রথমে তার দপ্তরে পাঠানো হয়। তিনি অভিযোগপত্র দুটি আদালতে জমা দিয়েছেন, আদালত গ্রহণও করেছেন।

এদিকে মদপানে ওই দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথম দিকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে, বিষপানের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই পুলিশ আদালতে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে শুধু গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনকে ওই ঘটনার ১১ দিন পরই গ্রেপ্তার করা হয়। বিএমডিএ তাকে সেই দিনই চাকরিচ্যুত করে। তিনি এখন কারাগারে আছেন।